ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল
ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল সম্পর্কে জানতে চান প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোন? তবে আপনি একদম সঠিক জায়গাতে এসেছেন। কেননা এই পোস্টটি সম্পূর্ণ আপনার মনের মতো করে সাজানো হয়েছে। তাই চলুন ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোন, আমরা অনেকেই আছি যারা ঋণ থেকে মুক্তি পেতে চাই এবং কোটিপতি হওয়ারও অনেক স্বপ্ন দেখি।
পোস্টের মূল পয়েন্টসমূহ: ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল
ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল
ঋণ থেকে মুক্তির কোরআনী আমল ও হাদিস
এবার আমরা ঋণ থেকে মুক্তির কোরআনী আমল ও হাদিস সম্পর্কে জানবো। আমরা ঋণ থেকে মুক্তি দোয়াসমূহ এবং এর অর্থ সহ কিছু হাদিস নিয়ে আলোচনা করবো তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক।
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মাক ফিনি বিহালালিকা 'আন হার-মিকা ওয়াগনিনি বি ফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি তোমার হারাম বস্তু হতে বাঁচিয়ে তোমার হালাল রিযিক দ্বারা আমাকে পরিতুষ্ট করে দাও (হালাল রুজিই যেন আমার জন্য যথেষ্ট হয়) এবং হারামের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন এবং প্রবণতা বোধ না করি এবং তোমার অনুগ্রহ অবদান দ্বারা তুমি ভিন্ন অন্য সকল হতে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও। (আবু দাউদ, ১:২১৬, তিরমিযী হাদিস-৩৫৬৩)
হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দোয়া পড়তে শুনতাম-
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া আউযুবিকা মিন গালাবাতিত দাইনি ওয়া কাহরির রিজালি’।
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোন, মাথায় রাখবেন- শুধু দোয়া করলে হবেনা। আপনাকে অবশ্যই ইসলামকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে হবে, ইসলাম আইন-কানুন, বিধি-বিধান, আদেশ-নিষেধ সব বিষয়গুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে এবং অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক সময় আদায় করতে হবে। যদি পারেন তবে বেশি বেশি নফল ইবাদত করুন এবং উপরের দোয়াগুলো নফল নামাজের পরে পড়ুন। এছাড়াও এই দোয়াগুলো আপনি প্রতি ফরজ নামাজের পরে পড়তে পারেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে, বেশি বেশি করে দান-সদকা করা। আপনার যতটুকু সামর্থ্য আপনি দান করুন এবং দানগুলো অবশ্যই সঠিক জায়গা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন জন্য করবেন। কেননা এই দানের মাধ্যমে আপনার উপরে আসা অনেক বিপদ-আপদ মহান আল্লাহ দূরে করে দিবেন।
কোটিপতি হওয়ার কোরআনী নির্দেশনা
ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল সম্পর্কে আমরা উপরে জেনে এসেছি। এবার আমরা কোটিপতি হওয়ার কোরআনী কিছু নির্দেশনা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ইসলামে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সফলতা অর্জনের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহর উপর ভরসা করে বৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করলে তিনি বরকত দেন। কোটিপতি হওয়ার জন্য ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু মৌলিক নীতির অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন:
- অধিকারভিত্তিক উপার্জন ইসলামে অনুমোদিত। সুদ, ঘুষ বা প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, "আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি করেন।" (সুরা আল-বাকারা: ২৭৬)
- আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন। কোরআনে উল্লেখ আছে, "মানুষের জন্য ততটুকুই রয়েছে, যতটুকু সে প্রচেষ্টা চালায়।" (সুরা আন-নাজম: ৩৯) অর্থাৎ, ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রম ছাড়া বড় ধরণের সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।
- হারাম থেকে দূরে থাকা। ব্যবসা বা চাকরির মাধ্যমে বৈধ সম্পদ অর্জন করাই ইসলামসম্মত। ইসলাম নিষিদ্ধ পণ্য বা সেবার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ গ্রহণকে হারাম ঘোষণা করেছে। তাই কোটিপতি হতে হলে অবশ্যই বৈধ পথ অনুসরণ করতে হবে।
- দান ও সমাজসেবামূলক কাজ করা। দানের ফলে সম্পদের বরকত বৃদ্ধি পায়। কোরআনে আছে, "যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান রয়েছে।" (সুরা আল-বাকারা: ২৬১) অর্থাৎ, দান করলে সম্পদ হ্রাস না হয়ে বরং বৃদ্ধি পায়।
ইসলামে ঋণ নেওয়া ও পরিশোধের নির্দেশনা
- অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, "ঋণ একটি দুশ্চিন্তার কারণ, যা রাতে ঘুম হারাম করে এবং দিনে সম্মানহানি ঘটায়।" তাই প্রয়োজন ছাড়া ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ঋণ গ্রহণের আগে পরিকল্পনা করা জরুরি। ঋণ নেওয়ার আগে তা পরিশোধের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋণ গ্রহন করো, তবে তা লিপিবদ্ধ করো।" (সুরা আল-বাকারা: ২৮২)
- সুদমুক্ত ঋণ গ্রহণ করা আবশ্যক। ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সুদের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করলে তা ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়। নবী (সা.) বলেন, "সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষী এবং লেখক-সকলেই সমানভাবে অপরাধী।" (সহিহ মুসলিম)
- ঋণ পরিশোধে আন্তরিকতা থাকা উচিত। কোরআনে উল্লেখ আছে, "যদি ঋণগ্রহীতা সংকটে থাকে, তবে তাকে সহজ সময় পর্যন্ত অবকাশ দাও।" (সুরা আল-বাকারা: ২৮০) ইসলামে ঋণ পরিশোধে ইচ্ছাকৃত অবহেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ঋণমুক্ত ও স্বচ্ছল জীবন গঠনের কার্যকর উপায়
- আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা। কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, "অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।" (সুরা আল-ইসরাঃ ২৭) অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- অবৈধ আয় পরিত্যাগ করা। হারাম অর্থে কখনো বরকত হয় না। নবী (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে, তার দোয়া কবুল হয় না।" তাই বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে ঋণমুক্ত হওয়া জরুরি।
- বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলা। সঠিকভাবে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব। কোরআনে বলা হয়েছে, "যারা সম্পদ সঞ্চয় করে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে।" (সুরা আত-তাওবা: ৩৪)।
- সঞ্চয়ের মাধ্যমে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল জীবন গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।