রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ফরজ গোসল কিভাবে করতে হয় - ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া

পবিত্র মাহে রমজান আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ছে এবং বাতাসের মাঝে আমরা রমজানের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। এ সময় আমাদের রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রমজানের আগে আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখাও অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ।

রমজান-মাসের-ফজিলত-ও-আমল

আমরা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানবো। রমজান মাস একটি পবিত্র মাস আমরা সকলেই জানি এবং আমরা এটিও জানি যে, এই মাস থেকে আমাদের শিক্ষা অর্জন করতে হবে।

পোস্টের মূল পয়েন্টসমূহ: রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

রমজান মাসের ফজিলত ও আমল

প্রিয় পাঠক ও দ্বীনি ভাই-বোন, আমরা এখন রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে আলোচনা করবো। তবে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

রমজান মাস ইসলাম ধর্মের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র মাস। এই মাসে আল্লাহর অসীম রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়, যা অন্যান্য মাসে পাওয়া যায় না। এটি এমন একটি মাস, যেখানে মুসলমানরা সিয়াম পালন করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। এই মাসে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দরজা খুলে দেন।

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের ফজিলত অসীম। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন, “রমজান মাসেই কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত ও সঠিক পথের নির্দেশিকা।” (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)। এই মাসে একটি নফল ইবাদত ফরজের সমান সওয়াব পায়, আর ফরজ ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রমজানের মাসের ফজিলত সম্পর্কে আরও জেনে নিন:

০১. এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে: 
রমজান মাসের অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এই মাসেই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

"রমজান হল সে মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশ এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী।" (সুরা বাকারা: ১৮৫)

এটি প্রমাণ করে যে, রমজান শুধু রোজার মাস নয়; বরং এটি কুরআনের মাস। এই মাসে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা সওয়াব লাভ করতে পারি।

০২. শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়:
হাদিসে এসেছে-
"রমজান মাস শুরু হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৯)

এই মাসে শয়তানের প্রভাব কমে যায়, ফলে মানুষ সহজেই ভালো কাজে মনোনিবেশ করতে পারে। তাই এটি আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ।

০৩. রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত- লাইলাতুল কদর:
রমজান মাসের সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এতে রয়েছে লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা বলেন-
"নিশ্চয়ই আমি কদর রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম করেছি।" (সুরা আল-কদর: ৩)

এই রাতে ইবাদত করলে হাজার মাস ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত লাইলাতুল কদরকে পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ দশ রাত বিশেষভাবে ইবাদতে কাটানো।

০৪. গুনাহ মাফের সুযোগ:
রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের প্রত্যাশায় রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০১)
রমজান আমাদের জন্য গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। তাই এই মাসে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা উচিত।

০৫. দোয়া কবুলের সময়:
রমজান মাসে রোজাদারের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন-
"তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: রোজাদারের ইফতারের সময়, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, এবং মজলুমের দোয়া।" (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৯৮)

তাই এই মাসে আল্লাহর কাছে সব ধরনের কল্যাণের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

০৬. জান্নাতের দরজা খোলা: 
এই মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়, যাতে মানুষ সহজে ইবাদত করতে পারে।

০৭. সিয়াম/রোজার পুরস্কার: 
রোজার সওয়াব আল্লাহ নিজেই দেবেন। হাদিসে আছে, “মানুষের প্রতিটি ভালো কাজের সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু রোজার সওয়াব আল্লাহ নিজ হাতে দেন।” (বুখারি)

রমজান মাসের আমল

আমরা উপরে রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে জেনে আসলাম। এখন আমরা জানবো রমজান মাসের আমল সম্পর্কে। ফজিলতপূর্ণ এই মাসে কিছু বিশেষ আমল করলে মহান আল্লাহ খুশি হন। নিচে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো তুলে ধরা হলো:

০১. রোজা রাখা:
রমজানের সর্বপ্রধান আমল হলো রোজা পালন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" (সুরা বাকারা: ১৮৩)

রোজা শুধু খাবার-পানীয় থেকে বিরত থাকার নাম নয়; বরং সকল ধরনের পাপ ও অন্যায় থেকে বেঁচে থাকার নাম।

০২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবিহ আদায় করা:
রমজানে নামাজের গুরুত্ব আরও বেশি। বিশেষ করে তারাবির নামাজ রমজানের অন্যতম প্রধান আমল। রাসুল (সা.) বলেছেন-
"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় তারাবিহ নামাজ পড়ে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৬০)

০৩. কুরআন তিলাওয়াত করা:
রমজান হলো কুরআনের মাস। তাই এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। রাসুল (সা.) নিজেও এই মাসে বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) এর সাথে কুরআন পাঠ করতেন।

০৪. দোয়া ও ইস্তেগফার করা:
রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। এ সময় আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

০৫. সাদকা ও দান-খয়রাত করা:
রাসুল (সা.) বলেছেন-
"রমজানে দান-সাদকা করা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬)
রমজানে দান-সাদকার মাধ্যমে গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

০৬. ইতিকাফ করা:
রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। রাসুল (সা.) প্রতি বছর এই দশ দিন ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফ মানে হলো মসজিদে অবস্থান করে পূর্ণ ইবাদতে মগ্ন থাকা।

০৭. আত্মসংযম অনুশীলন করা:
রমজান আমাদের আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। তাই এই মাসে মিথ্যা, গীবত, ঝগড়া-বিবাদ ও অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

০৮. পরিবার-সমাজের খোঁজ নেওয়া: 
রমজান হলো ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাস। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করুন, অসহায়দের পাশে দাঁড়ান।

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক মহা নেয়ামত। এই মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদতে ব্যয় করা এবং নেক আমল করে নিজেদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। রমজানের প্রতিটি রাত, প্রতিটি দিন আমাদের জন্য অমূল্য, তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের বরকতপূর্ণ সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। “আমিন”!

রামাদান কারিম শব্দের অর্থ কি?

প্রিয় পাঠক ও দ্বীনিভাই-বোন, আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জেনে এসেছি। এখন আমরা রমজান সম্পর্কে আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আমরা মনে করছি। এখন আমরা আলোচনা করবো, রামাদান কারিম শব্দের অর্থ কি? চলুন তবে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

“রামাদান কারিম” একটি আরবি বাক্য, যার অর্থ হলো “উপকারী রমজান” বা “মর্যাদাপূর্ণ রমজান।” মুসলিম বিশ্বে রমজান মাস শুরু হলে অনেকেই একে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে থাকে। “রামাদান” শব্দটি এসেছে আরবি “رمضان” (রমাদ্বান) থেকে, যার অর্থ হলো প্রচণ্ড গরম বা দহন। কারণ প্রাচীন আরব সমাজে রমজান মাস সাধারণত গরমের সময় আসত এবং মানুষ নিজেদের পাপ মোচনের জন্য এই মাসে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে দেহ ও মনকে পরিশুদ্ধ করত।

অন্যদিকে, “কারিম” শব্দটি আরবি “كريم” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো দয়ালু, উদার বা মহানুভব। এই অর্থ অনুসারে “রামাদান কারিম” বলতে বোঝায় যে, রমজান মাস একটি দানশীল ও কল্যাণকর মাস, যা মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত রহমত, বরকত এবং ক্ষমার সুযোগ নিয়ে আসে। ইসলামী সংস্কৃতিতে এটি শুধুমাত্র একটি শুভেচ্ছা বার্তা নয়, বরং এটির মাধ্যমে মানুষ রমজান মাসের মহত্ত্ব ও কল্যাণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

রমজান নামের আরবি অর্থ কি?

“রমজান” শব্দটি আরবি ভাষা থেকে উদ্ভূত এবং এটি ইসলামী পঞ্জিকার নবম মাসের নাম। মূল আরবি শব্দ “رمضان” (রমাদ্বান) এসেছে “رمض” (রমাদ) ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো প্রচণ্ড উত্তাপ বা জ্বলন্ত আগুন। ইসলামের শুরুর দিকে এই মাসটি প্রচণ্ড গরমের সময় পড়ত, তাই একে রমজান নামে অভিহিত করা হয়। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে “রমজান” শব্দের অর্থ আরও গভীর, কারণ এটি আত্মশুদ্ধির প্রতীক এবং মুসলমানদের গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ হওয়ার একটি বিশেষ সুযোগ।

রমজান মাসকে আরবি ভাষায় “শাহরুস সিয়াম” বলা হয়, যার অর্থ হলো “রোজার মাস।” এটি এমন একটি মাস যখন মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। রমজান শব্দের অর্থ কেবল তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি ও আত্মসংযমের প্রতীক। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই মাসে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের এক অনন্য সুযোগ থাকে।

রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

পবিত্র কুরআনে রমজান সম্পর্কে কুরআনে মোট ৪টি জায়গাতে বলা হয়েছে এবং সেগুলো হচ্ছে সূরা বাকারার ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫ ও ১৮৭ নং আয়াতে। আমরা এখন প্রতিটি আয়াত এবং আয়াতের অর্থ সম্পর্কে জানবো। 

পবিত্র কুরআনে রোজার বিধান ও ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
উচ্চারণ: ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ কুতিবা 'আলাইকুমসসিয়া-মু কামা- কুতিবা 'আলাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লা'আল্লাকুম তাত্তাকূন।

অর্থ: হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, রোজা কেবল ইবাদত নয়, বরং এটি তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রোজা মানুষের মন ও শরীরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং আত্মশুদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে।

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)
উচ্চারণ: আইয়া-মাম্মা'দূদা-তিন ফামান কা-না মিনকুম মারীদান আও 'আলা-ছাফারিন ফা'ইদ্দাতুম মিন আইয়া-মিন উখারা ওয়া 'আলাল্লাযীনা ইউতীকূনাহ্ ফিদইয়াতুন তা'আ-মু মিছকীনিন ফামান তাতাওওয়া'আ খাইরান ফাহুওয়া খাইরুল্লাহ্ ওয়া আন তাসূমূ খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম তা'লামূন।

অর্থ: নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া-একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান।

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
কুরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
উচ্চারণ: শাহরু রামাদা-নাল্লাযীউনঝিলা ফীহিল কুরআ-নু হুদাল লিন্না-ছি ওয়া বাইয়িনা-তিম মিনাল হুদা-ওয়াল ফুরকা-নি ফামান শাহিদা মিনকুমুশশাহরা ফালইয়াসুমহু ওয়া মান কা-না মারীদান আও 'আলা-ছাফারিন ফা'ইদ্দাতুম মিন আইয়া-মিন উখারা-ইউরীদুল্লা-হু বিকুমুল ইউছরা ওয়ালা-ইউরীদুবিকুমুল 'উছরা ওয়ালিতুকমিলুল 'ইদ্দাতা ওয়া লিতুকাব্বিরুল্লা-হা 'আলা-মা-হাদা-কুম ওয়া লা'আল্লাকুম তাশকরূন। 

অর্থ: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।”

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, রমজান কেবল রোজার মাস নয়, বরং এটি কুরআনের মাস। এ সময় বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)
উচ্চারণ: উহিল্লা লাকুম লাইলাতাসসিয়া-মিররাফাছুইলা-নিছাইকুম হুন্না লিবা-ছুল্লাকুম ওয়া আনতুম লিবা-ছুল লাহুন্না 'আলিমাল্লা-হু আন্নাকুম কুনতুম তাখতা-নূনা আনফুছাকুম ফাতাবা 'আলাইকুম ওয়া 'আফা- 'আনকুম ফালআ-না বা-শিরূহুন্না ওয়াবতাগ্ মা-কাতাবাল্লা-হু লাকুম ওয়া কুলু ওয়াশরাবূ হাত্তা-ইয়াতাবাইয়ানা লাকুমুল খাইতুল আবইয়াদুমিনাল খাইতিল আছওয়াদি মিনাল ফাজরি ছুম্মা আতিম্মুস সিয়া-মা ইলাল্লাইলি ওয়ালাতুবা-শিরূহুন্না ওয়া আনতুম 'আ-কিফুনা ফিল মাছা-জিদি তিলকা হুদূদুল্লা-হি ফালাতাকরাবৃহা-কাযা-লিকা ইউবাইয়িনুল্লা-হু আ-য়া-তিহী লিন্না-ছি লা'আল্লাহুম ইয়াত্তাকুন।

অর্থ: সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।

সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

প্রিয় পাঠক ও দ্বীনি ভাই-বোন, আমরা রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে উপরে আলোচনা করে এসেছি এবং একই সাথে আমরা আরও কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা রমজান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করবো।

সাওমের-গুরুত্ব-ও-তাৎপর্য

আমরা উপরে জেনে এসেছি যে, রমজান মাস ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম মাস। এই মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। রমজান আত্মশুদ্ধি, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাস। এই মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে এবং গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ পায়। রোজা আমাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা শিক্ষা দেয় এবং আত্মসংযমের অভ্যাস গড়ে তোলে।


রমজান মাসে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এই মাসে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা যায়। ইসলাম ধর্মে রমজান মাসের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, এই মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।

রমজান মাসে রাতের বেলা কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ ও তারাবিহ নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা ও অন্যান্য নেক আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

এটি আত্মশুদ্ধির মাস, যেখানে মুমিনরা গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ পায়। এই মাসে দান-খয়রাত ও নেক কাজের সওয়াব অন্যান্য সময়ের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

রমজানে কুরআন নাজিলের মাহাত্ম্য

রমজান মাসের আরেকটি বিশেষ গুরুত্ব হলো এই মাসেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এটি মানবজীবনের সঠিক পথ দেখানোর জন্য নাজিল হয়েছে।

কুরআন নাজিলের কারণে রমজান মাসের ফজিলত অন্য সব মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এই মাসে বিশেষভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত, কারণ কিয়ামতের দিন এটি মানুষের জন্য সুপারিশকারী হবে।

শবে কদরের রাতেই প্রথম কুরআন নাজিল শুরু হয়েছিল। তাই এই রাতের ইবাদতের ফজিলত হাজার মাসের ইবাদতের সমান। এই রাতে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তেগফার ও তেলাওয়াত করা উচিত।

কুরআন শুধু তেলাওয়াতের জন্য নয়, এটি আমাদের জীবন পরিচালনার নির্দেশনা দেয়। তাই রমজান মাসে কুরআন পড়া, বোঝা এবং এর ওপর আমল করা উচিত।

রোজার আমল সমূহ

প্রিয় পাঠক ও দ্বীনি ভাই-বোন, আমরা উপর থেকে রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে কিন্তু জেনে এসেছি তবে আমরা আপনাদের আরেকটু জানিয়ে দিতে চাই রোজার আমল সমূহ কি কি। কেননা এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। রোজা রাখা অবস্থায় আপনি যদি এই আমলগুলো করেন তবে আপনি বহুগণে সাওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ্। রমজান মাসে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা মুমিনদের জন্য কল্যাণকর। 

  • নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া অত্যন্ত জরুরি। রোজা পালনের পাশাপাশি নামাজ আদায় করলে রোজার পূর্ণতা আসে।
  • বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত। কুরআনের প্রতিটি আয়াতের রয়েছে অসীম সওয়াব। এই মাসে কুরআন খতম করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
  • দান-সদকা করা উচিত। রমজান মাস দান-খয়রাতের মাস। গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা, ইফতার করানো এবং যাকাত প্রদান করা এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল।
  • ইবাদত-বন্দেগির পরিমাণ বাড়ানো উচিত। তাহাজ্জুদ, তারাবিহ, নফল নামাজ, ইস্তেগফার এবং দোয়া করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।

রমজানের বিশেষ ইবাদতসমূহ

রমজানে কিছু বিশেষ ইবাদত রয়েছে, যা অন্যান্য মাসে করা কঠিন। এর মধ্যে অন্যতম হলো তারাবিহ নামাজ। এটি শুধু রমজান মাসেই পড়া হয় এবং অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

  • রমজানে কিয়ামুল লাইল তথা রাতের নামাজ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করতে পারে।
  • সেহরি খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রয়েছে। রোজার দিনে ধৈর্য ধারণ করা, খারাপ কথা না বলা এবং সংযম পালন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
  • রমজানে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। বিশেষ করে শবে কদরের রাতে, কারণ এটি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি মাফ করে দেন।

রমজানে তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব

রমজানে তারাবিহ নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটি মূলত নফল ইবাদত। নিচে এটি নিয়ে বলা হয়েছে-

রমজানে-তারাবিহ-নামাজের-গুরুত্ব

  • তারাবিহ নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি বিশ রাকাত বিশিষ্ট একটি নফল নামাজ, যা রাতে এশার নামাজের পর জামাতে আদায় করা হয়।
  • তারাবিহ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো কুরআন শ্রবণ করা এবং রমজানের ফজিলত অর্জন করা। রাসুল (সা.) নিজে এই নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে উৎসাহিত করেছেন।
  • এই নামাজের বিশেষ গুরুত্ব হলো, এটি মুসলমানদের ধৈর্যশীল ও ধার্মিক করে তোলে। যারা নিয়মিত তারাবিহ পড়েন, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করেন।
  • তারাবিহ নামাজের মাধ্যমে কুরআন খতম করার একটি বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায়। এই নামাজের সওয়াব অসীম এবং এটি মুসলিম উম্মাহকে আরও সংহত করে।

রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব

রমজান মাসে দান-সদকা করা খুবই সাওয়াবের একটি কাজটি। এই মাসটি যেমন রহমতের মাসে, ঠিক তেমনটিভাবে এই মাসের দান-সদকাগুলো আপনার জন্য রহমত স্বরূপ কাজ করবে।

  • রমজান মাস দান-সদকার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময়। এই মাসে দান করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বহুগুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
  • দরিদ্রদের সহায়তা করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। রমজানে যাকাত, ফিতরা ও অন্যান্য দান-খয়রাত করা মুসলমানদের কর্তব্য।
  • রাসুল (সা.) রমজানে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। তিনি বলেছেন, ‘দান গুনাহকে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়’।
  • রমজানে দান করলে আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই এই মাসে বেশি বেশি দান করা উচিত।

রমজান মাসে কোন দোয়া বেশি বেশি পড়তে হয়?

রমজান মাস হলো ইবাদত, তওবা ও ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসে আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দেওয়া হলো:

০১. রোজার নিয়ত দোয়া:
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আ'লিম। 
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করলাম। তুমি আমার রোজা কবুল করো, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

০২. ইফতারের দোয়া:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি।

০৩. রমজানে বেশি বেশি পড়ার দোয়া (ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া):
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।

০৪. রমজানে বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করা:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লেআ'লা মোহাম্মাদাও ও আ'লা আলি মোহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ'লা ইব্রাহিমা ও আ'লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ'লা মোহাম্মাদেও ও আ'লা আলি মোহাম্মাদ, কামা বারকতা আ'লা ইব্রাহিমা ও আ'লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.)
অর্থ: অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।

০৫. রমজানের বিশেষ রাতগুলোর (শেষ দশকে) জন্য দোয়া: 
উচ্চারণ: রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।

০৬. শবে কদরের দোয়া:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি রামাদান, ওয়া আ’ইন্নি আ’লা সিয়ামিহি ওয়া কিয়ামিহি, ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি রমজান মাসে আমাকে বরকত দাও, রোজা ও তারাবিহ নামাজ আদায়ে সাহায্য করো এবং আমার এই ইবাদত কবুল করো।

০৭. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া:
উচ্চারণ: রব্বিগফিরলি, ওয়ালিওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মুমিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করো, আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা করো এবং সকল মুমিনকে ক্ষমা করো, যেদিন হিসাব-নিকাশ অনুষ্ঠিত হবে।

০৮. পাপ মুক্তির দোয়া:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাহহির কালবি মিনান নিফাক, ওয়া আমালি মিনার রিয়া, ওয়া লিসানি মিনাল কাজিব, ওয়া আইনী মিনাল খিয়ানাহ, ফাইন্নাকা তালামু খাইনারাতাল আ’ইউনি, ওয়ামা তুখফিস সুদুর।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে কপটতা থেকে পবিত্র করো, আমার আমলকে দেখানো থেকে মুক্ত করো, আমার জিহ্বাকে মিথ্যা বলা থেকে রক্ষা করো, এবং আমার চোখকে প্রতারণা থেকে দূরে রাখো। নিশ্চয়ই তুমি জানো চোখের বিশ্বাসঘাতকতা এবং অন্তরের গোপন কথা।

০৯. দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের দোয়া:
উচ্চারণ: রব্বানা আতিনা মিন লাদুংকা রাহমাতান ওয়া হাইয়ি লানা মিন আমরিনা রাশাদা।
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে রহমত দান করো এবং আমাদের সকল কাজে সুপথ দান করো।

১০. ঈমান দৃঢ় করার দোয়া:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিত কালবি ‘আলা দ্বীনিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখো।

রমজান মাস আল্লাহর রহমত লাভের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। তাই এই মাসে আমাদের উচিত বেশি বেশি দোয়া করা, বিশেষ করে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া, ইবাদতের দোয়া ও কল্যাণের দোয়া। আল্লাহ আমাদের সব দোয়া কবুল করুন এবং রমজানের বরকত দান করুন। আমিন।

সাহরী ও ইফতার করার সময় কোন দোয়া পড়তে হয়?

সাহরী ও ইফতার রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময় যথাযথভাবে দোয়া পড়ার মাধ্যমে রোজার বরকত আরও বৃদ্ধি পায়। সাহরী খাওয়ার আগে ‘নিয়াত’ করা গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, "নিয়াত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণযোগ্য নয়।" সাহরীর জন্য সুস্পষ্ট নিয়াত করা উত্তম, যেমন: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি।" ইফতারের সময় দোয়া পড়াও সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ যখন ইফতার করবে, সে যেন এই দোয়া পড়ে - ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া ‘আলা রিযক্বিকা আফতারতু।” অর্থাৎ, "হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই প্রদত্ত রিযিকের দ্বারা ইফতার করছি।"

সাহরী-ও-ইফতার-করার-সময়-কোন-দোয়া-পড়তে-হয়

রমজান মাসে সাহরী ও ইফতারের দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। সাহরী খাওয়ার সময় দোয়া পড়া সুন্নত এবং এটি বরকতময়। রাসূল (সা.) বলেছেন, "সাহরী খাওয়ায় বরকত রয়েছে, তাই তোমরা সাহরী খাও।" ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়, তাই এই সময় আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য উত্তম কিছু চাওয়া উচিত।


ইফতারের দোয়া ছাড়াও রমজান মাসে বিভিন্ন নফল ইবাদত করার মাধ্যমে সওয়াব বৃদ্ধি করা যায়। এ মাসে কোরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া-দরূদ পাঠ করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার করা উচিত।

রমজান মাসে আমাদের শুধু দোয়া পড়লেই হবে না, বরং তা আমলের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। ইবাদত-বন্দেগিতে যত্নশীল হলে রমজানের সওয়াব লাভ করা সহজ হবে।

কাদের রমজানের রোজা না রাখলেও কোনো সমস্যা নেই?

ইসলাম একটি সহজ ও সহনশীল ধর্ম। যারা রোজা রাখতে শারীরিকভাবে অক্ষম, তাদের জন্য ইসলাম বিশেষ ছাড় দিয়েছে, যেমন: গর্ভবতী নারী, অসুস্থ ব্যক্তি, অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি, এবং মুসাফির (ভ্রমণকারী)।

  • অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ইসলাম ছাড় দিয়েছে। যদি কেউ এমন অসুস্থতায় ভোগে যা রোজা রাখলে আরও বেড়ে যেতে পারে, তবে তিনি রোজা না রেখে পরে কাযা করতে পারবেন। তবে যদি তিনি কখনো সুস্থ না হন, তাহলে ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া বা ফিদিয়া ( আরবি : الفدية ) এবং কাফ্ফারা বা কাফরাহ (আরবি: كفارة ) হল ইসলামে প্রদত্ত ধর্মীয় দান যখন একটি রোজা (উল্লেখ্যভাবে রমজানে ) মিস বা ভেঙে যায়। অনুদান খাদ্য, বা অর্থ হতে পারে, এবং এটি অভাবীদের খাওয়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কোরানে তাদের উল্লেখ আছে। কিছু সংস্থার অনলাইন ফিদিয়া এবং কাফফার বিকল্প রয়েছে।
  • গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েরা যদি মনে করেন রোজা রাখলে সন্তান বা নিজের ক্ষতি হতে পারে, তাহলে রোজা রাখতে বাধ্য নন। পরে সুযোগ মতো কাযা করে নিতে হবে।
  • মুসাফির (ভ্রমণকারী) যদি দীর্ঘ ভ্রমণে থাকেন, তবে তিনি রোজা রাখতে বাধ্য নন। তবে সুস্থ হলে পরে রোজা কাযা করতে হবে।

রমজান মাসে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় কি কি? 

রমজান মাসে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা উচিত। যেমন: 

  • নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, দান-সদকা করা, বেশি বেশি ইবাদত করা এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
  • রমজানে কিছু কাজ অবশ্যই বর্জনীয়। যেমন: মিথ্যা বলা, গীবত করা, ঝগড়া করা, সময় নষ্ট করা এবং অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া।
  • রমজান মাসে আত্মনিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হই, তবে রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
  • রমজান মাসে আমাদের উচিত নফল নামাজ, তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। পাশাপাশি রোজার সঠিক নিয়ম মেনে চলা ও রোজার উদ্দেশ্য বোঝা উচিত।

রমজান শেষে কীভাবে আমল চালিয়ে যাবো?

রমজান শেষে আমাদের আমল চালিয়ে যেতে হবে। রমজান শেষে যদি আমরা আমাদের ইবাদত চালিয়ে যাই, তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হবে।

  • রমজানের পরেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ চালিয়ে যাওয়া, নফল ইবাদত করা, দান-সদকা করা, এবং নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
  • শুধু রমজানেই ভালো মুসলিম হওয়া যথেষ্ট নয়। আমাদের উচিত রমজানের শিক্ষা বছরের বাকী সময়েও পালন করা।
  • রমজান মাস আমাদের শিখিয়েছে ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধি। তাই এই শিক্ষা যেন সারাবছর কাজে লাগে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

শেষ কথন

প্রিয় পাঠক ও দ্বীনি ভাই-বোন, আমরা আজকের আলোচনার একদম শেষ অংশে চলে এসেছি এবং আমরা রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে এ-যাবৎ যতটুকু আলোচনা করেছি তার শেষ কথন হিসেবে আমরা বলতে পারি- রমজান শুধু একটি মাস নয়, এটি আমাদের জন্য একটি প্রশিক্ষণকাল। রমজানের শিক্ষা যদি আমরা সারা বছর অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের জীবন আরও সুন্দর হবে। আমাদের মাথায় রাখতে হবে রমজানের প্রতিটি রোজা আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। বিধায় এটিতে কোনো প্রকারের অজুহাত চলবে না। নিয়ম মেনে প্রতিটি রোজা আমাদের রাখতে হবে। এছাড়াও রমজানের সময় সঠিকভাবে নামাজ-কালাম, দোয়া-দরুদ, কুরআন তেলওয়াত, দান-সদকা ও রোজার প্রতিটি নিয়ম সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। আমাদের উচিত রমজানের শিক্ষা ধরে রাখা এবং প্রতিদিন নেক আমল করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ বরকত লাভ করার তাওফিক দান করুক। “আমিন”!!

আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং রমজান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন