দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে জেনে নিন
দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে জেনে নিন। আজকে আমরা এই পোস্টের মাঝে উক্ত বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। তাই প্রিয় ভাই লেখাটি মনোযোগের সাথে পড়ুন, কেননা এটি আপনার জন্য!!
প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে বা তাঁর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে কি জায়েজ? ইসলাম এটিতে কি রায় দেয় বা ইসলামি বিধি-বিধানে কি এটিতে? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক।
পোস্টের মূল পয়েন্টসমূহ: দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে জেনে নিন
ভূমিকা
বিয়ে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি শুধু সামাজিক বন্ধন নয়,
বরং ধর্মীয় এবং নৈতিক দায়িত্বও বটে। ইসলাম বিয়েকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ
করেছে এবং এটি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে বিবেচিত।
একজন মুসলিম পুরুষের জন্য একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও, এটি কিছু শর্ত সাপেক্ষে
বৈধ। ইসলাম সমতা, ন্যায়বিচার ও স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালনের শর্তে একাধিক
বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। তবে প্রশ্ন আসে, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে
করা কি ইসলাম সমর্থন করে? তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিষয়টি সম্পর্কে।
দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে
ইসলামে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা বৈধ হলেও এটি বাঞ্ছনীয় নয়।
অর্থাৎ, ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিয়ে করা
যায়, কিন্তু স্ত্রীর মনে কষ্ট দেওয়া, তাকে অবহেলা করা বা তার অধিকার লঙ্ঘন করা
ইসলাম অনুমোদন করে না।
তবে অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলেও বিয়ে হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে,
ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি তখনি প্রদান করেছে, যখন উভয় স্ত্রীর হক সমানভাবে,
কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়া আদায় করতে পারবে, তখন। সাম্যতা বজায় রাখতে না পারলে
কিংবা হক আদায় করতে না পারলে দ্বিতীয় বিবাহ করা জায়েজ নয়।
যদিও অনুমতি ছাড়াই বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নেয়াই বাঞ্ছনীয়। যেহেতু
স্ত্রীকে খুশি রাখাও স্বামীর একটি দায়িত্ব। নবীজী এ বিষয়ে খুবই গুরুত্ব প্রদান
করেছেন।
আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে বলেন, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে সৃষ্টি
করেছেন তোমাদের সঙ্গীণীকে, যাতে তোমরা তাঁদের নিকট শান্তি লাভ করতে পারো ও
তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়
এতে বহু নিদর্শন রয়েছে, সেইসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সুরা: রূম, আয়াত ২১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
তিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর থেকেই তাঁর স্ত্রীকে
বানিয়েছেন, যাতে সে তাঁর নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে।
(সুরা: আরাফ, আয়াত ১৮৯)
একাধিক বিয়ের বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে
তোমার ভালো লাগে দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে
না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)।’ (সুরা: নিসা, আয়াত ৩)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমার নিকট হতে নারীদের সাথে সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ
করো। তাঁদেরকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। হাড়ের মধ্যে সর্বাধিক
বাঁকা হাড় হলো উপরেরটি। (সেই হাড় হতেই নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে)। অতএব তুমি
যদি তা সোজা করতে চাও তবে ভেঙে ফেলবে। আর ঐভাবে ফেলে রাখলে সর্বদা উহা বাঁকাই
থাকবে; সুতরাং তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।
(বুখারি, হাদিস ৫১৮৬)
ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে বা বহু বিবাহে উৎসাহিত করে তখনই যখন সব দিক দিয়ে শান্তি
বজায় রেখে, প্রথম স্ত্রীর খুশি মতে বিয়ে করতে পারবে। কুরআনের ভাষায় অবশ্যই সমতা
বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রথমজনকে অবহেলিত অবস্থায় রেখে যাওয়া ইসলাম
সমর্থন করে না। আর ভরণপোষণ দিতে না পারলে তো দ্বিতীয় বিয়েতে যেতেই পারবে
না।
দ্বিতীয় বিয়ে করার পূর্বে এর শর্তসমূহ জেনে নিন
দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে সেটি
সম্পর্কে আমরা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত কিছু আয়াতের মাধ্যমে একটি সু-স্পষ্ঠ ধারণা
পেয়েছি। এখন আমরা জানবো দ্বিতীয় বিবাহ করার পূর্বে এর শর্তসমূহ সম্পর্কে। একজন
পুরুষ যদি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান, তবে তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে,
যা ইসলামী বিধান অনুযায়ী পালন করা আবশ্যক:
- সমতা বজায় রাখা- উভয় স্ত্রীর মাঝে কোনো বৈষম্য রাখা যাবে না।
- ভরণ-পোষণের সামর্থ্য থাকা- স্ত্রীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আর্থিক সামর্থ্য থাকা জরুরি।
- ন্যায়বিচার করা- কারও প্রতি অবিচার করা যাবে না।
- আদর্শ স্বামী হওয়া- স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ের শাস্তি
প্রিয় ভাই, আপনি যদি আপনার প্রথম স্ত্রীকে অবহেলা করে, তার প্রতি দায়িত্ব পালন না করে, কেবল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করে, তাহলে আল্লাহর দরবারে তিনি কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবেন। কারণ, স্ত্রীদের প্রতি অন্যায় করা ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হাদিসে বলা হয়েছে- "তোমরা স্ত্রীদের প্রতি সদাচার করো এবং তাদের প্রতি অন্যায় করো না।" (তিরমিজি)
দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে লেখকের কিছু মনের কথা
প্রিয় ভাই, আপনি যদি আপনার প্রথম স্ত্রীকে কষ্টে রেখে, তাঁর প্রতি
যত্নশীল না হয়ে, তাঁর কোনো খুঁত দেখে বা কোনো দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁর প্রতি
অবিচার করে দ্বিতীয় বিবাহে জড়াতে চান সেটিও আবার নিজের স্ত্রীর মনের কথা না
জেনে, তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁকে গুরুত্ব না দিয়ে, তবে আল্লাহ তা'য়ালা
সেটি কখনই গ্রহণ করবেনা বরং পরকালে আপনি এর মহা শাস্তি ভোগ করবেন।
প্রিয় ভাই একটি বার ভেবে দেখুন, দ্বিতীয় বিবাহ করার পরে কি আপনার সংসার
টিকে থাকবে? যদি আপনার সংসার জীবনে কোনো সন্তান থেকে থাকে, আর সে সময় যদি আপনি
দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তা করেন, তবে কি আপনি আশা রাখতে পারেন আপনার দ্বিতীয়
স্ত্রী আপনার প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের দেখাশোনা করবে? আপনি লক্ষ্যে করুন আপনার
আশেপাশে, খোঁজ নিয়ে দেখুন একটু যাঁরা দুটি বিয়ে করেছে তাঁদের অধিকাংশ পরিবারের
অবস্থা যা খুবই শোচনীয়৷ পরিবার ভেঙ্গে যাবার মতো একটি অবস্থা। পরিবার শান্তি
খুঁজে পাবেননা, অশান্তি ছায়া গ্রাস করে ফেলেছে, যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন
না।
প্রিয় ভাই ভাবুন একবার, আপনার প্রথম স্ত্রী আপনার দ্বিতীয় বিবাহ কখনো
মেনে নিতে পারবেনা, মেয়েরা তো তাঁদের প্রিয় মানুষের কাছে অন্য কোনো নারীকে
দেখতে পারেনা, তাঁরা এটিতে খুবই কষ্ট পায়, তাঁরা এটিতে খুবই অস্বস্তি বোধ করে
এবং তাঁদের ভেতরটাতে যেন কেউ তখন খঞ্জর দিয়ে আঘাত করছে এমনটি অনুভব করে।
প্রিয় ভাই, আপনি ভাবছেন দ্বিতীয় বিবাহ করলে কোনো সমস্যা হবেনা বরং
রাসুলে করিম (সা.)-এর একটি বড় সুন্নাহ্ আপনি আদায় করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু
একবার নিজের বিবেক'কে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কি এটি ঠিক করছেন? আপনার প্রথম
স্ত্রীকে নারাজ করে, তাঁর প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে, তাঁর প্রতি যত্নশীল না হয়ে,
তাঁকে অবহেলার মাঝে ফেলে রেখে, আপনি দ্বিতীয় বিবাহের কথা চিন্তা করছেন? আপনার
প্রথম স্ত্রীকে যদি রাজি-খুশি না করাতে পারেন, তাঁকে কষ্টের মাঝে ফেলে যদি আপনি
দ্বিতীয় বিবাহ করেন তবে কি আপনাকে তাঁর চোখের পানি এবং তাঁর বুকের ভেতরের
যন্ত্রণার কৈফিয়ত সেই কিয়ামতের মাঠে আপনার রবের সামনে দাঁড়িয়ে দিতে হবেনা? কি
জবাব আপনি সেদিন দিবেন, নবির সুন্নাহ পালন করেছি তাও আবার নিজের প্রথম স্ত্রীকে
যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট, বেদনা, অবহেলার মাঝে ফেলে রেখে। আপনি কিভাবে প্রিয় রাসুলে
শাফায়াত পাবেন? কিভাবে আপনি আল্লাহ দিদার আশা রাখতে পারেন নিজের বিবেক'কে
জিজ্ঞেস করুন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে
পূর্ণতর মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার-আচারণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে উত্তম সেই
ব্যক্তি যে তাঁর স্ত্রীদের কাছে উত্তম। (ইবনে হিব্বান, হাদিস ৪১৭৬)
হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মাঝে সেই
ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল
এবং অনুগ্রহশীল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৪২০৪, তিরমিজি, হাদিস ২৬১২)
হাদিসগুলো পর্যলোচনা করলে বুঝা যায়, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম স্ত্রীর অনুমতি
নেয়াটাই জরুরী।
শেষ কথন
দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে এ বিষয়ের
আমরা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি এবং শেষ অংশে বলা যায়, ইসলামে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি
ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ হলেও নৈতিক ও আদর্শিকভাবে এটি পরামর্শযোগ্য নয়। ইসলামের
মূল শিক্ষা হলো ন্যায়বিচার ও সদাচার। তাই একজন পুরুষ যদি দ্বিতীয় বিয়ের
সিদ্ধান্ত নেন, তবে তার উচিত প্রথম স্ত্রীর মতামত জানা, তার প্রতি সুবিচার করা
এবং সংসারে শান্তি বজায় রাখা। অন্যথায়, ইসলাম এই বিয়েকে উৎসাহিত করে না এবং
ভবিষ্যতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন এবং এর চেয়ে বেশি আপনি পরকালে প্রিয়
রাসূলের শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, আল্লাহর নিকট কঠিনতম শাস্তি ভোগ করতে
পারেন।
আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং দ্বিতীয় বিয়ে করতে
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে কিনা ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে
দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের
পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।