প্রিয় পাঠক, আমরা প্রত্যেকেই
চাই যেন আমাকে দেখতে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম লাগে। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে
দেখেছেন যে কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? অথবা হ্যান্ডসাম বা
সুন্দর হতে হলে আসলে আমাদের কি করা প্রয়োজন? অথবা কোন-কোন জিনিসগুলোর উপর
ভিত্তি করে একজন মানুষকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম বলা যায়?
আজকে আমরা স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিস্তার আলোচনা করবো এবং
জানবো যে, কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? চলুন তবে বিস্তারিতভাবে
আলোচনা করা যাক।
পোস্টের মূল পয়েন্টসমূহ: কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়?
ভূমিকা
নিজেকে সবার সামনে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম দেখাইতে চাইলে কিছু বিষয় আমাদের মাথা
রাখা জরুরী। আপনাদের একটি বিষয় বলে রাখি যা আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে
বলে আমরা মনে করি এবং আমরা এটাও মনে করি যে, হ্যান্ডসাম বা সুন্দর হতে আপনাকে
এটি খুবই সাহায্য করবে। বিষয়টি হচ্ছে: নিজের চেহারাকে উজ্জ্বল নূরানী করতে
চাইলে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ করে ঘি খাবেন। কেননা আল্লাহ রাসূল
(সা.) নিজেও রুটির সাথে ঘি মেখে খেতেন। বতর্মান বিজ্ঞান বলছে, নিয়মিত এই খাবার
খেলে ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়। একজন মানুষকে হ্যান্ডসাম দেখা যায়।
স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম কি?
এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে যে, স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম বলতে আসলে কি বোঝায়? স্মার্ট ও
হ্যান্ডসাম বা সুন্দর মানে কিন্তু এই না যে আপনি খুব ফর্সা বা আপনার চেহারা খুব
সুন্দর। একইভাবে শ্যামলা বা একটু কম সুন্দর চেহারাকেও কিন্তু হ্যান্ডসাম বা
সুন্দর বলা যাবে না। আপনি কতটা হ্যান্ডসাম বা সুন্দর সেটা নির্ভর করে
আপনি অন্যের সামনে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করছেন তার উপর। যদি আপনি অন্যের
সামনে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তবেই আপনি হ্যান্ডসাম বা সুন্দর
বলে গণ্য হবেন। আর যদি সেটা না পারেন তবে আপনার চেহারা যত সুন্দরই হোক না
কেন অথবা আপনি যত ফর্সাই হন না কেন, আপনাকে কিন্তু কোনো মতেই হ্যান্ডসাম বা
সুন্দর বলা যাবে না।
আমরা যদি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের দিকে তাকাই, তবে আমরা দেখতে
পাবো তার উপস্থিতি, পদচারণা, ধ্যানধারণা সবকিছুই ছিল মানব ইতিহাসে সর্বোত্তম।
তিনি তার জীবদ্দশায় এমন একটিও কাজ করেননি, যেটাকে আপনি খারা বা অনুচিত বলতে
পারেন। তাই এদিক থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, আমাদের প্রিয় রাসূল জনাবে
মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) এই পৃথিবীর সবচেয়ে হ্যান্ডসাম বা সুন্দর মানুষ
ছিলেন।
কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়?
প্রিয় পাঠক, নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখার জন্য কিছু বিষয় আমাদের খেয়াল
রাখতে হবে এবং এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এগুলোকে আমরা ঠিকঠাক ভাবে মেনে চলছি
কি-না? আমরা আজকে নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখার মোট ০৫টি উপায় নিয়ে কথা
বলবো এবং জানবো কি করলে আমাদের হ্যান্ডসাম বা সুন্দর দেখায়। তবে চলুন শুরু করা
যাক এবং জানা যাক।
চুল ঠিক রেখে নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখা উপায়
আমাদের প্রথম টিপসটি হচ্ছে- নিজের চুলকে ঠিকঠাক রাখা। আপনি কি জানেন, নিজের
চুল ঠিক রেখে কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? তবে চলুন জেনে
আসি।
আপনি নিজেকে সুন্দর দেখাতে চাইলে নিজের চুলের অনেক যত্ন নিতে হবে। মনে রাখবেন,
একজন রুক্ষ এবং উস্কোখুস্কো চুলওয়ালা মানুষ যতই সুন্দর হোক না কেন তাকে কিন্তু
কখনোই হ্যান্ডসাম বা সুন্দর দেখতে লাগবে না। চুলের যত্নের পাশাপাশি হেয়ারকাটও
কিন্তু একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার মুখের আকৃতি যদি বড় হয় তবে সবসময় চুল
ছোট রাখবেন এবং আপনার মুখের আকৃতি যদি ছোট হয় সেক্ষেত্রে একটু বড় বা মাঝারি
চুলেই আপনাকে দেখতে বেশি ভালো লাগবে। মাথায় রাখবেন, যেন আপনার শরীরের তুলনায়
আপনার চেহারা বেশি অথবা বেশি ছোট না দেখায়।
হাঁটার ধরণ ঠিক রেখে নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখা উপায়
আমাদের দ্বিতীয় টিপসটি হচ্ছে- সুন্দরভাবে হাঁটা। একটি সুন্দর হাঁটার স্টাইল
মানুষের ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সুন্দর স্টাইলে হাঁটা লোকজনকে দেখতে
খুবই হ্যান্ডসাম লাগে। আপনি যত দামী আর সুন্দর পোশাকেই পরেন না কেন আপনার
হাঁটার স্টাইল যদি সুন্দর না হয় তেব কিন্তু কেউ আপনাকে হ্যান্ডসাম হিসেবে গণ্য
করবেনা। মূলত আত্মবিশ্বাসহীন মানুষেরাই বাজে স্টাইলে হাটেঁ। তাই নিজেকে সেই
কাতারে না ফেলতে চাইলে সুন্দরভাবে হাঁটা রপ্ত করে নিন। সুন্দর স্টাইলে হাঁটলে
নিঃসন্দেহে আপনাকে খুবই হ্যান্ডসাম লাগবে। আমাদের প্রিয় নবি (সা.) যখন হাঁটতেন
তখন তিনি পা মোবারক পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উঁচু জায়গা
থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনোদিকে তাকাতেন, তখন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেন না
বরং পুরো শরীরকে ঘুরিয়ে দিতেন এবং তার ব্যক্তিত্বের এই বহিঃপ্রকাশ তাকে
অন্যান্যদের থেকে সেরা ব্যক্তিত্বের আসনে আসীন করেছে।
সুগন্ধি ব্যবহার করে নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখা উপায়
হ্যান্ডসাম বা সুন্দর দেখানোর তৃতীয় টিপসটি হচ্ছে- সুগন্ধির ব্যবহার। একটি
জিনিস সর্বদা মনে রাখবেন। তা হলো- আপনি যত সুন্দর আর পরিপাটিই হন না কেন, আপনার
শরীর থেকে যদি দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে সব চেষ্টাই বৃথা। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের
হওয়া মানুষকে কখনোই হ্যান্ডসাম বলা যাবে না। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বে না প্রথম
টিপসটি হলো-নিয়মিত গোসল করা। এর পাশাপাশি নিয়মিত এলকোহল মুক্ত বডি স্প্রেও
ব্যবহার করবেন। এতে করে আপনার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার চান্স বহুগণ কমে
যাবে। এছাড়াও আপনারা বাড়তি ফ্রেশনেস আর একটা সুন্দর ইমপ্রেশন তৈরির জন্য
জামাকাপড়ে ভালো এলকোহল মুক্ত পারফিউম বা আতর ব্যবহার করতে পারেন। মোটকথা
হচ্ছে- যাই ব্যবহার করবেন না কেন; শুধু খেয়াল রাখবেন যেন আপনার শরীর থেকে
কোনোমতেই দুর্গন্ধ বের না হয়। মনে রাখবেন, ভালো সুগন্ধী ব্যবহার আপনার
ব্যক্তিত্বের ভালো একটি দিক প্রকাশ করে। সুগন্ধির প্রতি মহানবি (সা.) এর
প্রচন্ড অনুরাগ ছিল। তিনি নিয়মিত আতর ব্যবহার করতেন। মহানবি (সা.) নিজেও ছিলেন
সুগন্ধির আকর। তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির ঝরনা বয়ে যেত। লোকেরা
বুঝতে পারতো, নবী করিম (সা.) এই রাস্তা দিযে হেঁটে গেছেন।
এ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস:
খাদেমে রাসূল হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্নিত, মহানবি (সা.) ইরশাদ করেছেন-
তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। সেগুলো হচ্ছে: স্ত্রী,
সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজের মাধ্যমে।
(সানায়ি শরিফ, হাদিস নং:৩৯৩৯)
নিয়মিত ব্যায়াম করে নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখা উপায়
আজকে আমাদের চতুর্থ টিপসটি হচ্ছে- নিয়মিত ব্যায়াম করা। আপনারা হয়তো জানেন যে,
নিয়মিত ব্যায়াম করে কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? যদি জেনে না থাকে
তবে চলুন বিষয়টি সম্পর্কে জেনে আসি।
নিজেকে অন্যদের কাছে আকর্ষণীয় এবং হ্যান্ডসাম দেখাতে চাইলে ব্যায়াম এর কোনো
বিকল্প নেই। মনে রাখবেন, আদর্শ কিছু ব্যায়াম হলো: পুশ-আপ, সিট-আপ, পুল-আপ,
প্ল্যাংক ইত্যাদি। নিয়মিত এসব ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর থেকে নানা ধরনের হরমোন
নির্গত হয়। পাশাপাশি ব্যায়াম করলে আমাদের প্রচুর ঘামও বের হয়। সেই ঘামের সাথে
আমাদের শরীরে সৃষ্ট বহু বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। ব্যায়াম করার সময় আমাদের
শরীরের লোমকূপের মুখ খুলে যায়, যেন শরীর ভালোভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এর
ফলে আমাদের ত্বকে একটা আলাদা উজ্জ্বলতা আসে। নিজেকে হ্যান্ডসাম দেখতে চাইলে
ত্বকের এই উজ্জ্বলতা থাকাটা খুবই জরুরী। আর ত্বকের উজ্জ্বলতার বিষয়টি লেখার
শুরুতে বলেছিলাম, আল্লাহ রাসূল (সা.) নিজেও রুটি দেয় খেতেন একটি খাবার সেটি
হচ্ছে ঘি। ইবনে মাজাহর হাদিস থেকে জানা যায় রাসূল (সা.) রুটির উপরে ঘি
মেখে খেতেন।
বতর্মান বিজ্ঞান বলছে কোনো ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে, এক চামচ বিশুদ্ধ ঘি খেয়ে
ঘুমালে ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং তাকে দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম
দেখায়। তবে মনে রাখবেন ঘি খাওয়ার পরে আপনাকে কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
আর ১ চামচের বেশি ঘি খাওয়া যাবেনা।
কথা বলার ধরণ ঠিক রেখে নিজেকে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম রাখা উপায়
প্রিয় পাঠক, কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? এ বিষয় আজকে আমাদের
পঞ্চম টিপসটি হচ্ছে- আমরা লেখার শুরু বলে এসেছি যে, আপনি কতটা হ্যান্ডসাম, সেটা
নির্ভর করবে আপনি কিভাবে অন্যের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছে তার উপর। আপনি যত
সুন্দরই হন না কেন আপনার মাঝে যদি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকে, কমিউনিকেশন স্কিল
এর অভাব থাকে, আপনার কথা বলার স্টাইল যদি ভালো না হয়, আপনি যদি বিনয়ী না হন তবে
আপনি যাই করেন না কেন, আপনাকে কিন্তু কোনোদিনই হ্যান্ডসাম বলা
যাবেনা।
আপনি যদি নিজেকে হ্যান্ডসাম বা সুন্দর দেখাতে চান, অন্যদের চেয়ে উত্তম
ব্যক্তিত্বের হতে চান, তবে আপনাকে এই মাত্র বলা সবকয়টি গুণই অর্জন করতে হবে।
কারো সাথে কথা বলতে গেলে যদি আপনার জড়তা কাজ করে, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগেন
তবে আজ থেকেই এগুলো সমাধানের চেষ্টা করে যান। আপনি নিজের প্রতি যত বেশি
আত্মবিশ্বাসী হবেন, আপনার সোশ্যাল এবং কমিউনিকেশন স্কিল যত বেশি উন্নত করবেন
আপনি ততবেশি হ্যান্ডসাম হয়ে উঠবেন।
শেষ কথন
আজকে আমরা আমাদের মূল বিষয়- কিভাবে স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? এর
শেষাংশে চলে এসেছি এবং শেষ কথন হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি উপরে আলোচনা করে আসা
০৫টি টিপস সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তবে আপনি খুবই সহজেই বাকিদের থেকে হ্যান্ডসাম
বা সুন্দর হয়ে উঠবেন। এগুলো মেনে চললে আপনার কনফিডেন্স লেভেল অনেক বেশি বেড়ে
যাবে এবং আপনি সবধরনের পরিস্থিতিতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন।
আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং কিভাবে স্মার্ট ও
হ্যান্ডসাম হওয়া যায়? সে সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে
সক্ষম হয়েছেন।
আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে
দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের
পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।