প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো এবং বিষয়টি নিয়ে বিস্তারভাবে জানবো। আপনি যদি
ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে কোনো কিছুন না জেনে থাকেন তবে আজকে আমাদের এই লেখাটি
পড়ার বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
আজকের এই বিষয়টি অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এটি আমরা বেশ
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টর উপর সাজিয়েছি যেন আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়। চলুন
তবে জেনে নেওয়া যাক।
পোস্টের মূল পয়েন্টসমূহ: ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস কী?
আমরা সর্বপ্রথমে জেনে নেই ডায়াবেটিস মূলত কী হয় এবং তারপর আমরা জানবো
ডায়াবেটিস কিভাবে হয়ে থাকে। আমরা এই দুটি বিষয় জানার পরে আমাদের মূল বিষয়
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো।
মূত্রের সাথে গ্লুকোজ বা সুগার দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়াকে ডাযাবেটিস বলে।
মানব দেহের অগ্ন্যাশয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরী না হলে বা শরীর তা
ব্যবহারে ব্যার্থ হলে তাকে ডায়াবেটিস বলে। যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন না হলে রক্তে
শর্করার পরিমান বেড়ে যাওয়াকে বলে ডায়াবেটিস। অথবা আরেকভাবে বলা যায়, কোন কারণে অগ্নাশেয় ক্ষতিগ্রস্থ হলে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরী করতে পারে না। Islets of Langer Hangs গ্রন্থির কোষ থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। ইনসুলিন গ্লুকোজকে কোষের ভিতরে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। যখন আমাদের শরীরে যথেষ্ঠ পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হয় না কিংবা শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, তখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায়। এটাকেই ডায়াবেটিস বলে।
ডায়াবেটিস কিভাবে এবং কেন হয়?
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা থেকে উদ্ভূত হয়। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না বা শরীর উৎপন্ন ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়। ইনসুলিন একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিসের প্রধান দুইটি প্রকার রয়েছে: টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত অটোইমিউন রোগ হিসেবে দেখা দেয়, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে আক্রমণ করে। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত জীবনধারার কারণে, যেমন অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক অনিয়ম, এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়। বংশগত কারণও ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ হতে পারে।
তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় যে কিছু নির্দিষ্ট কারণ, যেমন মানসিক চাপ, ধূমপান, এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সুতরাং, জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক, আমরা এবার আমাদের মূল বিষয় ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কি-না আপনি সেটি কিভাবে বুঝবেন? এটি বুঝার বেশ কয়েকটি
গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে। আপনি যদি এই লক্ষণগুলো আপনার মাঝে দেখতে পান তবে
বুঝতে পারবেন আপনি ডায়াবেটিস রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে।
-
বেশী প্রসাব হওয়া ও রাতে অধিক প্রসাব হওয়া;
-
যথেষ্ঠ খাওয়া স্বত্বেও ওজন কমে যাওয়া;
-
ক্লান্তি ও দূর্বলতা বোধ করা;
-
ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া;
-
খোশ-পাঁচড়া, ফোড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া;
ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলো আপনি যখন আপনার মাঝে দেখতে পাচ্ছেন তখন আপনার কি
করা উচিত? অবশ্যই এটির জন্য চিকিৎসাগ্রহণ করা উচিত এবং খুবই দ্রুত। তবে চলুন
জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস রোগে আমরা কি কি চিকিৎসা নিতে পারি।
-
ইনসুলিন ইনজেকশন/ট্যাবলেট;
-
সঠিক পরিমাণে খাদ্য/ক্যালরী গ্রহণ;
-
শারীরিক পরিশ্রম, প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট হাটা;
-
নিয়মিত রক্তে শর্করা (গ্লুকোজের) মাত্রা নির্ণয় করা, এছাড়া ডায়াবেটিস
রোগীরা হরমোন বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ডায়াবেটিস রোগে প্রশিক্ষিত
চিকিৎসকের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলা।
ডায়াবেটিস রোগের ঘরোয়া প্রতিকার
আমরা এখন আমাদের মূল বিষয় ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এটির ঘরোয়া
প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। তবে চলুন এই বিষয়টি নিয়ে বিশাদভাবে জানা যাক।
ডায়াবেটিসের ঘরোয়া প্রতিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হল নিয়মিত তেজপাতা, কারি
পাতা, মেথি বীজ এবং করলা খাওয়া। এ উপাদানগুলো প্রাকৃতিকভাবে রক্তে শর্করার
মাত্রা কমাতে সহায়ক। সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি পান করা, বা করলার রস
খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, আমলকি, হলুদ এবং
নিমপাতার রসও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
আদা এবং দারুচিনি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, কারণ এগুলো ইনসুলিন সংবেদনশীলতা
বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে, ঘরোয়া প্রতিকার
ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া প্রতিকারের
পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ অব্যাহত রাখা
প্রয়োজন।
আমরা ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম।
এবার আমরা জানবো ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে। চলুন তবে এই
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়
আমার আশেপাশে দিন-দিন অনেক ডায়াবেটিস রোগী বেড়েই চলেছে এবং বাড়ার মূল কারণ
হচ্ছে- মানুষ এই রোগীটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়না এবং এই রোগটি প্রতিরোধে কী কী
করণীয় তারা সেটি জানেনা। ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমরা
জেনেছি এবার আমরা জানবো এটিকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়। নিচে বিস্তারিত বলা
হলো:
-
নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করতে হবে; (দিনে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট)
আস্তে নয়, বেশ জোরে হাঁটুন যাতে গায়ে ঘাম ছোটে Brisk Walk, জোরে হাঁটা ও
দৌড়ের মাঝামাঝি।
-
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থেকে সুস্থ স্বাভবিক ওজন বজায় রাখতে
হবে;
-
পরিশোধিত খাবার বিশেষ করে শে^তসার জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে
হবে;
-
খাদ্যে অতিরিক্ত চর্বি বিশেষ করে প্রাণীজ চর্বি খাওয়া পরিহার করতে
হবে;
-
৪০ বৎসর বয়সের পর প্রতি ৬ মাস অন্তর ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা তা-পরীক্ষা
করে দেখতে হবে।
-
ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।
-
বাহারি দাওয়াত কম কম খাবেন। মাসে একবারের বেশি কক্ষনো নয়। খেলেও
চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা ভালো।
-
বিএমআই ২১-২৩ এর মধ্যে রাখুন।
-
অলস শরীর ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের কারখানা। শ্রমবিমুখতা পরিহার করুন।
কর্মমুখর জীবনাচরণ বেছে নিন, সুস্থ থাকুন।
-
উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন বজায় রাখুন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী?
ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে শর্করা বা ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমানোর জন্য ট্যাবলেট
বা ইনসুলিন নিয়ে থাকে। এ সমস্ত ট্যাবলেট বা ইনসুলিন নেয়ার ফলে রক্তের শর্করা
বা ব্লাড সুগারের পরিমাণ হঠাৎ খুব কমে যায় অর্থাৎ ২.৫ মিলি লিটারের কম হলে একে
হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়র লক্ষণসমূহ
-
অস্বস্থি বোধ ও মাথা ব্যাথা;
-
বুক ধড়ফড় করা ও শরীর কাঁপা;
-
খুব বেশী ঘাম হওয়া ও ঝিমিয়ে পরা;
-
বুক কাঁপতে থাকা বা অস্থিরতা বা চিনতে না পারা;
-
ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, চোখে ঘোলা দেখা ও দূর্বলতা;
-
অস্বাভাবিক আচরণ বা কথায় জড়তা ও মেজাজ দেখানো বা রাগ হওয়া;
-
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা স্ট্রোক করা বা হার্ট এটাক হওয়া;
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণসমূহ
-
ট্যাবলেট ও ইনসুলিনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হলে;
-
নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার না খেলে বা কম খেলে;
-
ইনসুলিন নেয়ার পর যথা সময়ে খাবার না খেলে,
-
হঠাৎ বেশী ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করলে,
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার হলে কি করা উচিত?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া উপসর্গগুলো বুজে-দ্রুত ব্লাড সুগার এর লেভেল বাড়ানোর জন্য
ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় রোগী মৃত্যু বরন করতে পারে। তাই রোগীকে বাচানোর
জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা জরুরী:
-
দ্রুত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার দিতে হবে;
-
১ (এক) চা- চামচ চিনি, জেলী বা মধু খেতে দিতে হবে;
-
৫ থেকে ৬ টি শক্ত জাতীয় চকলেট খেতে দিতে হবে;
-
কমপক্ষে ১২০ মিঃ লিঃ ফ্রুট জুস বা সফট ড্রিংক খেতে হবে;
-
৩ (তিন) টি গুকোজ ট্যবলেট বা গুকোজ জেল খেতে হবে;
-
অনভ্যস্থ ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে হবে;
-
জরুরী খাদ্য সংগে বহন করতে হবে;
-
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করতে হবে;
ডায়াবেটিস রোগীর ওজন কমানোর উপায়
সর্ব প্রথমে ক্যালরী নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন। দৈনিক ৫০০ ক্যালোরি কম গ্রহন করে,
দৈহিক পরিশ্রম বাড়ানো হলে উভয় মিলে ওজন কমে। (Diet Plus Exercise is the best
way for reducing body fat). আপনার খাদ্যের চর্বি কমানো। চিনি, মিষ্টি জাতীয়
খাবার এবং চিনি যুক্ত পানীয় গ্রহণ কমানো এবং অলস জীবন যাপন পরিহার
করা।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাদ্য প্রস্তুতের নীতি
আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন তবে আপনাকে খাবার দিকটিতে খুবই সর্তকতা
অবলম্বন করা জরুরী। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খাদ্য প্রস্তুতের
নীতি নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
-
শক্তি সরবরাহের জন্য ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, ইত্যাদি কাবোর্হাইড্রেট
থাকবে। ৬০-৭০% মোট শক্তি চাহিদার।
-
দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পূরণের জন্য দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, সুরগি, ডাল,
বাদাম, বীচি ইত্যাদি।
-
ভিটামিনের জন্য কলিজা, বিভিন্ন শাকপাতা, সবুজ ও রঙিন সবজি ও ফল, লেবু
জাতীয় ফল, আমড়া, আমলকি, পেয়ারা, বাতাবি লেবু।
-
দেহের পরিপাক তন্ত্র ও সুষ্ঠু মল নিষ্কাশনের জন্য ডাঁটা, শাকপাতা খোসাসমেত
ফল খাওয়া, ভূসিসমেত আটা, ঢেকি ছাটা চাল, সিদ্ধ চাল ইত্যাদি।
-
উদ্ভিজ্য তেল, তৈলাক্ত মাছ। অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড সরবরাহের জন্য
উদ্ভিজ্জ তেল, তৈলাক্ত মাছ উপকারী, তবে ডালডা, মার্জারিন, মাখন, মাংসের
চর্বি স্বাস্থ্যকর নয়।
-
চিনি ও মিষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। মিষ্টি ফল, সরবত ভালো।
মিষ্টি, হালুয়া ইত্যঅদি বড়দের জন্য নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
-
শশ্য ও ডালের অনুপাত ৩:১ হওয়া উচিত।
-
মোট প্রটিনের ১/৩ অংশ প্রাণিজ প্রোটিন এবং বাকি ২/৩ অংশ বাদাম, ডাল, বীচি
জাতীয় খাদ্য হতে গ্রহন করা ভালো।
-
ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ অথবা দুধ জাতীয় খাদ্য ছানা, পায়েস, দই, পুডিং
খেতে হবে। বড়দের জন্য পুটি, মলা, ঢেলা ইত্যাদি কাটা সমেত ছেট মাছ খেতে
হবে। এর সাথে লেবু খেতে হবে।
ডায়াবেটিস কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা জীবনধারা এবং
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ঔষধের যথাযথ ব্যবহার দ্বারা
সম্ভব। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রক্তে শর্করার
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর জন্য প্রতিদিন রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা
এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা জরুরি। এছাড়া, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাটের
সঠিক অনুপাত বজায় রেখে একটি ব্যালেন্সড ডায়েট গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
একইসঙ্গে মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করাও ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। স্ট্রেসের কারণে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। সুতরাং, ধ্যান, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য
স্ট্রেস রিলিফ টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে
বিরত থাকা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা
রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কোন খাবার খাওয়া উচিত?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খাদ্যতালিকায় এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে
হবে যা কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সম্পন্ন। কম GI সম্পন্ন খাবার রক্তে শর্করার
মাত্রা ধীরে বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে। উদাহরণস্বরূপ,
সবুজ শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম, বীজ এবং লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার। এছাড়া,
পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন চীনাবাদাম, মাছ, মুরগি এবং
ডাল।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ওটমিল, ব্রাউন রাইস, এবং ফলমূল খাওয়া ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে প্রোটিন এবং ফাইবার বাড়ালে
রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে। এছাড়া, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান এবং
চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করা উচিত।
ডায়াবেটিসে কি কি খাদ্য বর্জন করতে হয়?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা রক্তে শর্করার
মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে। যেমন, সাদা চাল, সাদা রুটি, প্যাস্ট্রি, চিনি
মেশানো পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। এছাড়া, চর্বি এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে
চলা উচিত, কারণ এগুলো ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধি
করে।
ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার, যেমন প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক্স এবং বেকড আইটেম
এড়ানো উচিত। এছাড়া, সোডিয়ামযুক্ত খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত মাংস, প্যাকেটজাত
চিপস এবং পিকলস এড়ানো ভালো। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায়
রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা
সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে মা এবং শিশুর জন্য ঝুঁকি বাড়ায়। এর লক্ষণগুলোর
মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি, এবং দৃষ্টিশক্তি কমে
যাওয়া। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা
এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট মেনে চলা জরুরি।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সহায়ক। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং কম GI সম্পন্ন খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া,
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন গ্রহণ করতে হতে পারে। গর্ভাবস্থায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডেলিভারির পর শারীরিক জটিলতা কমে যায়।
ডায়াবেটিস কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে কমানো যায়?
ডায়াবেটিস প্রাকৃতিক উপায়ে কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা
যায়। যেমন-
-
নিয়মিত শরীরচর্চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা বা যোগব্যায়াম করা যেতে
পারে।
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে
তাজা শাকসবজি এবং গোটা শস্য খাওয়া উচিত।
-
মানসিক চাপ কমানো গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা
বেড়ে যায়, তাই ধ্যান এবং যোগব্যায়াম করতে পারেন।
-
এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ধূমপান এবং
মদ্যপান থেকে বিরত থাকাও প্রয়োজন। প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জীবনযাপনের এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সেরা ব্যায়ামগুলো কী?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত
অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানো রক্তে
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা
বাড়ায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে। এছাড়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও
ব্যায়াম কার্যকর।
ওজন প্রশিক্ষণ বা রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম যেমন ভার উত্তোলনও ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এগুলো পেশী শক্তি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। তবে,
ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা ডায়েট প্ল্যান
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা ডায়েট প্ল্যান এমন হতে হবে যাতে রক্তে শর্করার
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া এবং
প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করা জরুরি। সকালে প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রেকফাস্ট যেমন
ডিম, ওটমিল বা সবজি খাওয়া যেতে পারে। দুপুরের খাবারে গোটা শস্য, শাকসবজি এবং
কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন খাওয়া উচিত।
সন্ধ্যায় হালকা খাবার যেমন ফল বা বাদাম খাওয়া যেতে পারে। রাতে হালকা খাবার
খাওয়া এবং কম শর্করা সমৃদ্ধ খাবার বেছে নেওয়া উচিত। পরিমাণমতো খাবার খাওয়া
এবং বেশি পরিমাণে সবজি, ফলমূল ও শস্যজাত খাবার খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সহায়ক।
ডায়াবেটিসে খাদ্যতালিকা তৈরি করার সহজ পদ্ধতি
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হলে প্রথমেই রক্তে
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক খাবার চিহ্নিত করতে হবে। কম GI
সম্পন্ন খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি, গোটা শস্য, লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার এবং
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার তালিকায় রাখা উচিত।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তিন বেলা খাবার খাওয়া এবং মাঝেমধ্যে হালকা স্ন্যাকস
গ্রহণ করা উচিত। শর্করা জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিন এবং ফাইবার
বাড়ানো উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান এবং চিনি মেশানো পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা তৈরি করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
সহজ হবে।
শেষ কথন
আপনি যদি আমাদের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তবে আমরা নিশ্চত যে, ডায়াবেটিস
রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। একজন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখা খুবই জরুরী, যেমন:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা, যেখানে সঠিক
খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি সুষম জীবনযাপনই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর
প্রতিকার। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা
অত্যাবশ্যক।
আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং ডায়াবেটিস রোগের
লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম
হয়েছেন।
আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে
দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের
পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।