গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স এর উপকারিতা
মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা - মাদার হরলিক্স এর অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স এর উপকারিতা কি? এবং গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খেলে মায়ের এবং তার গর্ভে থাকা সন্তানের কেমন উপকার হয়? যদি জেনে না থাকেন তবে আজকে আমাদের এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার আহবান জানাচ্ছি।
আমরা আজকে বিস্তারিতভাবে জানবো গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স এর উপকারিতা এবং এর অপকারিতা সম্পর্কে। তাই চলুন জেনে আসা যাক এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করা যাক।
পোস্টের মূল পয়েন্টসমূহ: গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স এর উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা
- পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ: গর্ভাবস্থায় প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং শিশুর পেশী, হাড় ও টিস্যুর বিকাশ নিশ্চিত করে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া জরুরি। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম এবং দুধ-জাতীয় খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস। একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক প্রায় ৭০-৮০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। প্রোটিনের ঘাটতি হলে শিশুর গঠন অপরিপূর্ণ হতে পারে এবং মায়েরও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই মায়েদের উচিত খাবারে প্রোটিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
- আয়রন এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ বাড়ার কারণে শরীরে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন নিশ্চিত করে। আয়রনের অভাবে মায়ের শরীরে অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে, যা শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। আয়রনের ভালো উৎস হলো- পালংশাক, লাল শাক, কলা, বিট, ডাল, খেজুর, মুরগির লিভার ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় মায়েদের দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।
- ক্যালসিয়াম এবং হাড়ের গঠন: শিশুর হাড় এবং দাঁতের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকে ক্যালসিয়াম শিশুর শরীরে সরবরাহ করা হয়। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে মায়ের দাঁত এবং হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। দুধ, দই, ছানা, ছোট মাছ, ব্রোকলি এবং পালংশাক ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। গর্ভবতী মায়ের দৈনিক প্রায় ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
- ভিটামিন ডি এবং সূর্যের আলো: গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে এবং শিশুর হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে মায়ের শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে এবং শিশুর হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাদার হরলিক্স কী এবং এর উপাদানসমূহ কী কী?
মাদার হরলিক্স কী?
মাদার হরলিক্সের উপাদানসমূহ কী কী?
- আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড: আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং রক্তের কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এটি গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে এবং মায়ের রক্তস্বল্পতা পূরণে কার্যকরী।
- ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি শিশুর হাড়ের গঠন এবং মায়ের হাড়ের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। এটি গর্ভাবস্থার হাড়ের দুর্বলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ভিটামিন বি১২ এবং ওমেগা-৩: ভিটামিন বি১২ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। এটি শিশুর স্নায়ু গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স এর উপকারিতা
- গর্ভকালীন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে: গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে যায়। মাদার হরলিক্সে রয়েছে ২৫টিরও বেশি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা মায়ের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। এটি মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং ফলিক অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাদার হরলিক্সে থাকা প্রোটিন মায়ের পেশী ও টিস্যুর গঠনে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি শিশুর শরীরের পেশী ও টিস্যুর গঠনে সাহায্য করে। নিয়মিত মাদার হরলিক্স পান করলে গর্ভবতী মায়ের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর বিকাশে সাহায্য করে: মাদার হরলিক্সে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় এই উপাদানগুলোর ঘাটতি হলে শিশুর স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি১২ স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে ওমেগা-৩ এর উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তির বিকাশ হয়। তাই গর্ভকালীন সময়ে মাদার হরলিক্স খাওয়া একটি কার্যকর পদ্ধতি।
- হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে: গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় ও দাঁতের সঠিক গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। মাদার হরলিক্সে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি রয়েছে, যা শিশুর হাড় এবং দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি মায়ের হাড়ের দুর্বলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়, কারণ এই ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় গঠনে ব্যবহৃত হয়। মাদার হরলিক্স এই ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে এবং মায়ের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন ডি মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
- রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর: গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া একটি সাধারণ সমস্যা। আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের অভাবেই সাধারণত রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। মাদার হরলিক্সে উচ্চ মাত্রায় আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি মায়ের শরীরে অক্সিজেনের সঠিক পরিবহন নিশ্চিত করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলিক অ্যাসিড শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা হলে শিশুর অপরিপূর্ণ জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মাদার হরলিক্স এই সমস্যাগুলো থেকে মাকে সুরক্ষা দেয়।
- হজমশক্তি উন্নত করে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে: গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মায়েদের হজমে সমস্যা হয়। মাদার হরলিক্সে উপস্থিত খাদ্যআঁশ (ডায়েটারি ফাইবার) হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি মায়ের শরীরে পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, যা শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর। মাদার হরলিক্সে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মায়ের ক্লান্তি দূর করে এবং গর্ভাবস্থায় সার্বিক শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- মায়ের মানসিক চাপ কমায়: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক মায়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। মানসিক চাপ মা ও অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মাদার হরলিক্সে উপস্থিত ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা মায়ের মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। এটি নিয়মিত গ্রহণ করলে মায়ের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়। মায়ের মানসিক চাপ কমলে শিশুর বিকাশও স্বাস্থ্যকরভাবে হতে পারে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: গর্ভকালীন সময়ে অনেক মায়ের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়, যা গর্ভাবস্থার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। মাদার হরলিক্সে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে, যা শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, এতে রয়েছে কম মাত্রার সোডিয়াম, যা রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত মাদার হরলিক্স গ্রহণের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় মায়ের হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মাদার হরলিক্সে থাকা কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে। যারা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য মাদার হরলিক্স একটি উপকারী পানীয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গর্ভাবস্থায় মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, ফলে বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। মাদার হরলিক্সে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য এবং শিশুর নিরাপদ বিকাশের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
- মায়ের ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক মায়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। মাদার হরলিক্সে উপস্থিত জিঙ্ক, বায়োটিন, এবং ভিটামিন এ ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ত্বককে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি এটি ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে, যা গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে আমরা গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিলাম এবং জানলাম গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি একটি সহজ এবং কার্যকর সমাধান। সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি মাদার হরলিক্স পানের মাধ্যমে গর্ভকালীন সময়ের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
- হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে: মাদার হরলিক্সে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন অনেক বেশি, কারণ এটি মায়ের হাড় এবং শিশুর হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। মাদার হরলিক্স নিয়মিত পান করলে গর্ভকালীন ও পরবর্তী সময়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এছাড়াও, ভিটামিন ডি হাড়কে শক্তিশালী করে এবং হাড় ভেঙে যাওয়া বা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের মধ্যে হাড়ের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। মাদার হরলিক্সের ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য মিনারেল এই ব্যথা কমাতে কার্যকরী। এটি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
- রক্তশূন্যতা রোধে সাহায্য করে: মাদার হরলিক্সে রয়েছে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভকালীন সময়ে আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, যা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে তোলে। মাদার হরলিক্স নিয়মিত পান করলে মায়ের রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং ক্লান্তিভাব কমে যায়।
- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে ভূমিকা: মাদার হরলিক্সে উপস্থিত ডিএইচএ (DHA), ভিটামিন বি১২ এবং অন্যান্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভকালীন সময়ে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন। ডিএইচএ শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও চোখের গঠনেও সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিএইচএ গ্রহণ করলে শিশুর মানসিক বিকাশ এবং শেখার ক্ষমতা ভালো হয়। তাই গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স পানে শিশুর মানসিক বিকাশ দ্রুত ঘটে।
- হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: মাদার হরলিক্সে উপস্থিত ডায়েটারি ফাইবার হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, যা শরীরে অস্বস্তির কারণ হয়। এই পানীয় হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এছাড়াও, এতে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান হজমতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে। নিয়মিত মাদার হরলিক্স খেলে হজমের সমস্যা কমে যায় এবং শরীরের পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মাদার হরলিক্সে রয়েছে ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর। ভিটামিন সি শরীরে মুক্ত মৌল বা ফ্রি-র্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং কোষের সুরক্ষা দেয়। মাদার হরলিক্সের পুষ্টিগুণ গর্ভবতী মা ও শিশুকে রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি দূর করে: গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা অনেক সময় ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভব করেন। মাদার হরলিক্সে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন ভিটামিন, যা শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তিভাব দূর করে। প্রোটিন গর্ভকালীন শরীরের টিস্যু মেরামত করে এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরের বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে, যা ক্লান্তি কমায়। নিয়মিত এই পানীয় গ্রহণ করলে মায়েরা দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারেন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: মাদার হরলিক্স শরীরে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়। এতে উপস্থিত প্রোটিন ও ফাইবার মায়েদের দীর্ঘ সময় ক্ষুধামুক্ত রাখে, যা অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিন পেশির গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরে ফ্যাট জমা কমায়। গর্ভকালীন সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত ওজন শিশু জন্মের সময় জটিলতা তৈরি করতে পারে। মাদার হরলিক্স পানে শরীর সুস্থ ও ওজন নিয়ন্ত্রিত থাকে।
- মাদার হরলিক্সে শর্করা ও ক্যালরির পরিমাণ থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শরীরে চর্বি জমা বাড়িয়ে দেয়। গর্ভাবস্থায় নিয়ন্ত্রিত ওজন বজায় রাখা জরুরি, কারণ অতিরিক্ত ওজন মায়ের পাশাপাশি শিশুর জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। এতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পেটের সমস্যা।
- অতিরিক্ত মাদার হরলিক্স খেলে গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু, তাদের জন্য এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় বেশি খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
- মাদার হরলিক্সে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই মাদার হরলিক্স গ্রহণে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বজায় রাখা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খেলে স্বাস্থ্যকর থাকে, তবে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- পরিমিত মাত্রা মেনে চলা: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে সর্বোচ্চ ১-২ গ্লাস মাদার হরলিক্স খাওয়া যেতে পারে। সকালে নাস্তার সাথে এবং রাতে হালকা খাবারের পর মাদার হরলিক্স খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত।
- সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি করা: মাদার হরলিক্স তৈরি করার সময় দুধের সাথে পরিমিত গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। গরম বা ঠান্ডা দুধে এটি খাওয়া যায়। কিন্তু চিনি যোগ করা থেকে বিরত থাকুন।
- খালি পেটে না খাওয়া: গর্ভাবস্থায় খালি পেটে মাদার হরলিক্স খাওয়া ঠিক নয়। এতে অ্যাসিডিটি এবং গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে গ্রহণ করা: শুধু মাদার হরলিক্সের উপর নির্ভরশীল না হয়ে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, মাছ এবং ডিমও খাওয়া উচিত।
কখন মাদার হরলিক্স এড়িয়ে চলা উচিত
- মাদার হরলিক্সে দুধজাত উপাদান থাকে, যা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু ব্যক্তিদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। এতে পেটের ব্যথা, গ্যাস বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
- মাদার হরলিক্সে শর্করার পরিমাণ থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত বা সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন ঝুঁকিপূর্ণ। যাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের মাদার হরলিক্স খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। মাদার হরলিক্স অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা ঠিক নয়।
বর্তমানে মাদার হরলিক্স এর দাম কত
- মাদার হরলিক্সের দাম বাজারে বিভিন্ন প্যাকেজ এবং স্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণত এটি ২০০ গ্রাম, ৪০০ গ্রাম এবং ১ কেজির প্যাকেটে পাওয়া যায়।
- বর্তমানে আপনি বাংলাদেশে Mothers Horlicks ৩৫০ গ্রাম ৪৯০/- টাকা মূল্যে ক্রয় করতে পারছেন। এছাড়া যেকোনো সময় এটির মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে।
- অনলাইন এবং অফলাইন স্টোরে দাম কিছুটা পার্থক্য হতে পারে। বেশিরভাগ বড় সুপারশপ ও ফার্মেসিতে মাদার হরলিক্স সহজেই পাওয়া যায়। অনলাইনে অর্ডার করলে মাঝে মাঝে ছাড়ও পাওয়া যায়।
- তবে দাম পরিবর্তনশীল, তাই কেনার আগে বিভিন্ন দোকানের সাথে তুলনা করা ভালো।