গাছের গোড়ায় কি দিলে গাছ মারা যায়

কোন গাছের পাতা খেলে মানুষ মারা যায়

গোড়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে গাছের সুরক্ষা হওয়ার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর আজকে আমরা আলোচনা করব এবং জানবো যে, গাছের গোড়ায় কি দিলে গাছ মারা যায় এবং আমরা আরও জানবো কিভাবে গাছকে বাঁচানো যায়।

গাছের গোড়ায় কি দিলে গাছ মারা যায়

তবে চলুন আমরা আমাদের বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি এবং জানি গাছের গোড়ায় কি দিলে গাছ মারা যায়? সেই সাথে জানে নেই গাছের গোড়াতে কোন বিষ দিলে গাছে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

গাছের গোড়ায় ক্ষতিকর পদার্থ প্রয়োগের ফলে গাছ মারা যেতে পারে

গাছের গোড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা গাছের সুরক্ষা ও পোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গাছের রোগ এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং পরিবেশের পরিবর্তন এবং পরিমাপ থেকে গাছকে রক্ষা করে। গোড়া প্রাথমিকভাবে গাছের ভৌত সম্পর্কে জানা যায় এবং তাদের জীবনকাল ও সুস্থতা নির্ধারণ করে। গাছের গোড়ার যদি উপযুক্ত যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে গাছের ভিক্ষা ও সংক্রান্ত সমস্যাগুলি হতে পারে, যা গাছের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

গাছের গোড়ায় কিছু বিশেষ পদার্থ বা রাসায়নিক ব্যবহার করলে তা গাছের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো যেমন গাছের জন্য ক্ষতিকর ঠিক তেমন মাটির জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

০১. লবণ

গাছের গোড়ায় লবণ দিলে গাছ মারা যায় মূলত পানি শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে। লবণ মাটির মধ্যে গিয়ে অসমোসিস প্রক্রিয়ায় গাছের শিকড় থেকে পানি শোষণ করে নেয়। ফলে গাছের শিকড় পর্যাপ্ত পানি পায় না এবং ডিহাইড্রেশন ঘটে। এর ফলে গাছের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে না। লবণ মাটির পিএইচ মাত্রা পরিবর্তন করে, যা গাছের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। মাটিতে লবণের উপস্থিতি গাছের শিকড়ের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ঘটায় এবং শিকড়ের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে। এছাড়া, লবণ গাছের প্রোটোপ্লাজম ধ্বংস করে, যা গাছের কোষের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুন: 

অতিরিক্ত লবণ মাটি থেকে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস শোষণ বাধাগ্রস্ত করে, ফলে গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, গাছ সম্পূর্ণভাবে মারা যায়। তাই গাছের গোড়ায় লবণ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

০২. ক্লোরিনযুক্ত পানি

অনেক সময় আমরা চিন্তা করি যে ক্লোরিনযুক্ত পানি গাছের জন্য ভালো হতে পারে। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। গাছের গোড়ায় ক্লোরিনযুক্ত পানি দিলে গাছ মারা যায় মূলত শিকড়ের ক্ষতির কারণে। ক্লোরিন গাছের শিকড়ের প্রোটিনকে ধ্বংস করে, যা শিকড়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এর ফলে শিকড় পানি ও পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। এছাড়া, ক্লোরিন মাটির পিএইচ মাত্রা পরিবর্তন করে, যা গাছের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যায়।

০৩. অতিরিক্ত সার

সার গাছের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তবে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা গাছের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত সার দিলে গাছ মারা যায় মূলত মাটির পিএইচ মাত্রা ও লবণাক্ততার পরিবর্তনের কারণে। অতিরিক্ত সার মাটিতে লবণের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, যা গাছের শিকড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে গাছ পর্যাপ্ত পানি পায় না এবং শুকিয়ে যায়। এছাড়া, অতিরিক্ত সার শিকড়ের প্রোটিন ও এনজাইম ধ্বংস করে, যা শিকড়ের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। এতে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে মারা যায়। অতএব, গাছের জন্য সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

০৪. হার্বিসাইড

গাছের গোড়ায় হার্বিসাইড দিলে গাছ মারা যায় মূলত শিকড় ও কাণ্ডের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার কারণে। হার্বিসাইড শিকড়ের কোষ প্রাচীর ও প্রোটোপ্লাজম ধ্বংস করে, যা শিকড়ের পানি ও পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা হ্রাস করে। এর ফলে গাছ প্রয়োজনীয় পানি ও পুষ্টি পায় না। এছাড়া, হার্বিসাইড গাছের ক্লোরোফিল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে, যা ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। ফলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যায়। অতএব, গাছের সুরক্ষার জন্য হার্বিসাইড ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।

গাছের গোড়ায় শুধুমাত্র রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে গাছ মারা যায় না বরং আরো বেশ কিছু কারণের ফলে গাছের মৃত্যু ঘটাতে পারে। নিচে কিছু কার্যক্রম উল্লেখ করা হলো:

০১. শিকড় কেটে ফেলা

গাছের শিকড় কেটে ফেলা গাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিকড় গাছের প্রধান অংশ যা মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি শোষণ করে। শিকড় কেটে ফেললে গাছ পানিশূন্য হয়ে যায় এবং মারা যায়।

০২. মাটির গুণমান হ্রাস

মাটির গুণমান হ্রাস পেলে গাছের শিকড় পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। মাটিতে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খনিজ পদার্থের অভাব হলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়।

০৩. মাটির উপর অতিরিক্ত চাপ

গাছের গোড়ায় মাটি খুবই কোমল থাকা উচিত। কিন্তু মাটির উপর অতিরিক্ত চাপ দিলে শিকড়ে ক্ষতি হয়। ফলে শিকড় মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি শোষণ করতে পারে না এবং গাছ শুকিয়ে যায়।

গাছ রক্ষায় কিছু পরামর্শ

গাছ রক্ষায় কিছু পরামর্শ

আপনি যদি দেখেন যে গাছের শিকড়ে ক্ষতিকর জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে এবং গাছের গোড়া পচতে শুরু করেছে তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে গাছের মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই গাছকে বাঁচাতে হলে কিছু পদক্ষেপ আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। গাছ আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আমাদের পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:

০১. সঠিক পরিমাণে সার ব্যবহার

গাছের জন্য সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত সার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। সারের পরিমাণ নির্ধারণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

০২. প্রাকৃতিক পানি ব্যবহার

ক্লোরিনমুক্ত প্রাকৃতিক পানি ব্যবহার করুন। বৃষ্টির পানি সবচেয়ে উপযুক্ত। যদি এটি সম্ভব না হয়, তবে পানি পরিষ্কার করার জন্য ফিল্টার ব্যবহার করুন।

০৩. মাটির গুণমান বজায় রাখা

মাটির গুণমান বজায় রাখতে কম্পোস্ট এবং জৈব সার ব্যবহার করুন। মাটির পিএইচ মাত্রা পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।

০৪. শিকড়ের সুরক্ষা

গাছের শিকড় কাটা থেকে বিরত থাকুন। যদি শিকড় কাটতেই হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং যত্ন সহকারে কাজ করুন।

০৫. মাটি সুরক্ষা

গাছের গোড়ার মাটি সুরক্ষিত রাখতে বেশি পা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। গোড়ার চারপাশে ঘাস বা অন্যান্য উদ্ভিদ লাগিয়ে রাখুন যাতে মাটি সুরক্ষিত থাকে।

গাছের গোড়ায় কি দিলে গাছ মারা যায় এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সবারই এটি সম্পর্কে জানা উচিত। আমরা যদি সচেতন হই এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে চলি, তবে আমাদের গাছগুলো সুস্থ ও সবল থাকবে এবং দীর্ঘ মেয়াদী তারা বেঁচে থাকবে আর যা আমাদের জন্য খুবই ভালো একটি খবর।

আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং গাছের গোড়ায় কি দিলে গাছ মারা যায় সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন