গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার বা পেটের গ্যাস কমানোর খাবার

সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা গ্যাস্ট্রাইটিস হলো পেটের আস্তরণের প্রদাহ, জ্বালা বা ক্ষয়। এটি তীব্র থেকে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় পরিণত হতে পারে। আপনি কি জানেন গ্যাস্ট্রিক হলে এটি কিভাবে দূর করবেন এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার বা পেটের গ্যাস কমানোর খাবার কি কি রয়েছে?

গ্যাস্ট্রিক-দূর-করার-খাবার

আমরা আজকে আলোচনা করবো গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার বা পেটের গ্যাস কমানোর খাবার সম্পর্কে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানবো এবং জানবো গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার কী কী রয়েছে। চলুন তবে আমাদের বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

পোস্ট সূচীপত্র : গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার বা পেটের গ্যাস কমানোর খাবার

ভূমিকা

আমরা লোভনীয় খাবার দেখলে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা আর সেটি সম্পর্কে আমরা সবসময় অসর্তক। সব খাবার আমাদের দেহের সাথে মানান খায় না। কিছু কিছু খাদ্য রয়েছে যেগুলো গ্রহণ করলে আমাদের দেহের অনেক প্রকারের সমস্যা দেখা দেয়। গ্যাস্ট্রিক হলো সে রকম একটি বড় সমস্যা। শীতের দিনে তেল যুক্ত খাবার বিশেষ করে ভাজা জাতীয় খাবার একটু বেশিই খাওয়া হয়। আর সেই খাবার গ্রহণের পর ফলও মেলে হাতেনাতে। পেটে দেখা পড়ে ভরে উঠে গ্যাসে আর তখন গ্যাস্ট্রিক তাড়াতে সাহায্য নিতে হয় ওষুধের। 

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধে সমস্যা কমলেও এটি দীর্ঘদিন ধরে খেতে থাকলে একটা সময় শরীরে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ঔষুধ না খেয়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করতে পারলে। সেজন্য প্রথমত আপনার খাদ্যভাষে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। এরপর খেতে হবে এমন কিছু খাবার, যেগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সারিয়ে তুলতে কাজ করবে। চলুন তেব জানা যাক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কোন খাবারগুলো নিয়মিত খেলে ঔষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক দূর হয়ে যাবে

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে মেথির ভূমিকা

রোজ সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে তার উপকারিতা অনেক। ভেজানো মেথি থেকে হজমশক্তি বাড়ে সঙ্গে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দূর হয়। পেটের যে কোনও সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ফোলাভাব দূর করতে মেথির জুড়ি মেলা ভার। তাই হঠাৎ করে গ্যাস-অম্বল এবং পেটের সমস্যা বাড়লে অবশ্যই খান মেথি।

গ্যাস্ট্রিক-দূরকরণে-মেথির-ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে তুলসী পাতার ভূমিকা

তুলসী পাতার মধ্যে থাকা উপাদান আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে কার্যকর। তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া বা তুলসী চা পান করা যেতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'তুলসীর কার্মিনেটিভ বৈশিষ্ট্য হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস ও ফোলাভাব কমাতে পারে। তুলসীর পানি পান করলে পাচনতন্ত্র প্রশমিত হয় এবং হজমে সহয়তা করে। ' এ ছাড়া তুলসী পানি পানে আপনার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ ও জীবাণু বের করে দিতে সাহায্য করে।

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে মৌরির ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আরেকটি কার্যকরী খাবার হলো মৌরি। মৌরি আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। মৌরি চিবিয়ে খাওয়া বা মৌরি চা পান করা যেতে পারে। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও কাজ করে। মৌরি আমাদের পাকস্থলী এবং অন্ত্রের পেশীগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে সৃষ্ট গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

গ্যাস্ট্রিক-দূরকরণে-পুদিনা-পাতার-ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে পুদিনা পাতার ভূমিকা

পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা মেন্থল আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে শীতল করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তাই অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা দিলে কয়েকটি পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারেন বা এক কাপ পানিতে ৪-৫ টি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন বা চাইলে তাতে একটু মধুও যোগ করতে পারেন। পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে নিয়মিত পুদিনাপাতা খাবেন। এই ভেষজ আপনার পেটে গ্যাস জমতে দেয় না। পেপারমিন্ট অয়েলে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল যৌগ, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে আদার ভূমিকা

আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে এবং এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আদার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এর অন্যতম উপকারিতা হলো এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহয়তা করে। মূলত আদা খাবার দ্রুত হজম করতে কাজ করে। খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে আদা কুসুম গরম পানির সঙ্গে সামান্য লবণ দিয়ে খেলে উপকার পাবেন। 

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে কলা ও কমলার ভূমিকা

কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কলার সলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। কলা আমাদের পেটের অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে এবং এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে শান্ত করে। প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খাওয়া যেতে পারে। কমলালেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে এবং গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে। কমলালেবু খাওয়া বা এর রস পান করা যেতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক-দূরকরণে-দইয়ের-ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিক দূরকরণে দইয়ের ভূমিকা

দই আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রোবায়োটিকস থাকে যা আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সহজ ভাষায় যদি বলা যায়, ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক কিছু অত্যন্ত উপকারী ব্যাকটেরিয়া। আর এইসব ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের হাল ফেরানোর কাজে সিদ্ধহস। আর অন্ত্র সুস্থ-সবল থাকলে যে অনায়াসে গ্যাস-অ্যাসিডিটির ফাঁদ এড়িয়ে যেতে পারবেন, তা তো বলাই বাহুল্য। এমনকি অচিরেই বাড়বে হজমশক্তি। তাই পেটের সমস্যাকে ফাঁকি দিয়ে জীবন কাটাতে চাইলে রোজ দই খেতে পারেন। তাতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।


গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরীকরণে আপনাকে সর্বপ্রথম সচেতন হতে হবে এবং আপনার খাদ্যভাষে আনতে হবে পরিবর্তন। যদি সুস্থ, সুন্দর জীবন চান তবে আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে তবে আপনি তার ফল হাতেনাতে পেয়ে যাবে। মনে রাখবেন, শরীর আপনার, স্বাস্থ্য আপনার এর যত্ন আপনাকে নিজ দায়িত্বের সাথে নিতে হবে। 

শেষ কথন

গ্যাস্ট্রিক এবং পেটের গ্যাসের সমস্যা আমাদের জীবনে প্রায়ই দেখা যায়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বেশ অস্বস্তির সৃষ্টি করে। তবে, কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। পেটের গ্যাস কমাতে এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করতে প্রথমেই আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার যোগ করতে পারেন। যেমন, শসা, লেটুস, ব্রকলি, এবং গাজর এই ধরনের খাবারগুলি হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়।

পাশাপাশি, আদা এবং পুদিনা পাতা গ্যাস কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। আদার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান হজম শক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রশমিত করে। অন্যদিকে, পুদিনা পাতা কোলনকে শিথিল করে এবং পেটের ফুলাভাব কমাতে সহায়তা করে। গ্যাসের সমস্যা কমাতে মধু এবং গরম পানিও খুব উপকারী। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে তা অন্ত্রের মাংসপেশিকে শিথিল করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে তোলে।


এছাড়া, গ্যাসের সমস্যা দূর করতে দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। পানি হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরের অতিরিক্ত গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে। তদ্ব্যতীত, দিনে একবার লেবু-পানি পান করতে পারেন। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হজমের উন্নতি ঘটায় ও গ্যাসের সমস্যা কমাতে সহায়ক।

গ্যাস্ট্রিক এবং গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এক কথায়, এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নেওয়া এবং পানি পানের পরিমাণ বাড়ানো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।


আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার বা পেটের গ্যাস কমানোর খাবার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন