নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করার নিয়ম - নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন
জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID Card যার পূর্ণনাম- National identity card। এটি হচ্ছে এমন একটি ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট যা ব্যক্তির নাগরিকত্বের প্রমাণ বহন করে। আর আজকে আমরা জানবো নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য এটি একটি বাধ্যতামূলক নথি। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সেবা গ্রহন সহ রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা পেতে হলে NID Card প্রয়োজন হয়।
পোস্ট সূচীপত্র: নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করার নিয়ম বা নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন
নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে ভূমিকা
জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনের যোগ্যতা
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করার নিয়ম
আমরা মূলত নতুন যারা ভোটার হতে চাচ্ছি খুব সহজে অনলাইনে আবেদন করতে পারবো। তবে অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম অনেকেরই জানা নেই তাই চলুন বিস্তারিতভাবে আপনাদের জানিয়ে দেয়।
প্রথমে আপনাকে একটি ব্রাউজার চালু করতে হবে। এরপর সার্চবারে টাইপ করুন https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজেস্ব সাইট যেখান থেকে আমাদের আবেদন করতে হয়।
আবেদনের ধাপ সমূহ:
- আবেদন করার জন্য- উপরে ছবিতে দেখানো জায়গাতে (আবেদন করুন) ক্লিক করুন। ক্লিক করা মাত্রই আপনার সামনে একটি অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন নামের বক্স চলে আসবে এবং এর নিচে লেখা থাকবে পুরো নাম (ইংরেজিতে) আর তার নিচে থাকে জন্ম তারিখ। এখানে আপনার নাম আপনার জন্ম নিবন্ধন, সার্টিফিকেট অনুযায়ী সঠিকভাবে দেখে শুনে লিখবেন। এরপর নিচে একটি ক্যাপচার কোড দেওয়া থাকবে যেটি লিখে বহাল বাটনে ক্লিক করে। পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবেন।
- পরবর্তী ধাপে আপনাকে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করতে হবে। মোবাইল নাম্বারটি অবশ্যই আপনার কাছে থাকতে হবে। কেননা যে নাম্বারটি আপনি প্রদান করবেন সেই নাম্বারে একটি ৬ ডিজিটের কোড দিয়ে ভেরিফাই করতে হবে এবং সেটি অবশ্যই ৬০ সেকেন্ডের ভিতরে। এই ধাপটি সম্পূর্ণ হলে আপনি পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবে।
- পরবর্তী ধাপে আপনাকে একটি ইউজারনেম ও পার্সওয়ার্ড দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ইউজারনেম অবশ্যই ছোট হাতে অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং একটি চিহ্ন ব্যবহার করে দিতে হবে এবং অবশ্যই ৮ ডিজিটের হতে হবে। এরপর পার্সওয়ার্ড দিয়ে পুনরায় আবার পার্সওয়ার্ড কনফার্ম করে নিচে ক্যাপচার কোডটি দিয়ে বহাল বাটনে ক্লিক করে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আপনি পরবর্তী ধাপে আপনার নির্দিষ্ট স্থানে পৌছাবেন অর্থাৎ আপনার প্রোফাইলে।
- প্রোফাইলে এসে বিস্তারিত প্রোফাইল বাটনে ক্লিক করুন এবং দেখবেন ডানদিকের উপরে এডিট নামে একটি বাটন থাকবে সেখানে ক্লিক করুন।
- এডিট বাটনে ক্লিক করে আপনি দেখতে পাবেন যে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাচ্ছে। যেমন- নাম (বাংলা), নাম (ইংরেজি), লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান এগুলো দিতে হবে এবং মাথায় রাখবেন এগুলো অবশ্যই আপনার জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দেখে সবকিছু চেক করে দিবেন। এরপর পিতার তথ্য, এরপর মাতার তথ্য তার নিচে বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর তথ্য সঠিক কাগজপত্র দেখে ফিলআপ করুন। মনে রাখবেন, যদি ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন তবে পরবর্তীতে আপনি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবে। তাই কয়েকবার চেক করে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবেন।
- উপরের তথ্যগুলো দেওয়ার পরে আপনি অন্যান্য তথ্যের অপশনে পৌছাবেন। যেখানে আপনাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা (বাংলা) দেখাতে হবে আর মাথায় রাখবেন আপনি যদি উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখান তবে আপনাকে তার নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রমাণ স্বরূপ আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। তাই ভেবে চিন্তে সঠিক যোগ্যতা নির্বাচন করুন। এটি নির্বাচন করার পরে আসবে পেশা। আপনাকে আপনার পেশা নির্বাচন করতে হবে। এরপর অসমর্থতা, সনাক্তকরন চিহ্ন (বাংলা), টিন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর যদি থাকে তবে সেগুলো দেখাতে পারেন। আর যদি না থাকে তবে কোন সমস্যা নেই এবং অবশ্যই আপনাকে নিজের ধর্ম দেখাতে হবে এবং ধর্ম দেখানোর পরে এই ধাপটি শেষ। পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবেন।
- পরবর্তী ধাপে আপনাকে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দেখাতে হবে। তবে এর আগে আপনাকে উপরে আপনার দেশ নির্বাচন করতে হবে (Bangladesh)।
- এরপর আপনাকে নিজেস্ব ভোটার এরিয়া দেখাতে হবে। আপনি চাইলে বর্তমান অথবা স্থায়ী ঠিকানাতে ভোটা এরিয়া দেখাতে পারেন। তবে মনে রাখবেন আপনি যে উপজেলার ভিতরে ভোটার এরিয়া দেখাবেন সে উপজেলার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আপনাকে ভোটার পরবর্তী সকল কাজ করতে হবে।
- ঠিকানাতে আপনাকে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, আর.এম.ও (যদি পৌরসভা হন তবে পৌরসভা দিতে হবে, যদি ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশন হন তবে এগুলো সে স্থানে দিতে হবে।) এভাবে সিটি কর্পোরেশন অথবা পৌরসভা, ইউনিয়ন (পৌরসভা হলে ওয়াড নং), মৌজা/মহল্লা (গ্রাম), ইউনিয়নের ওয়ার্ড নম্বর, গ্রাম/রাস্তা, বাসা/হোল্ডিং নম্বর (বাংলা) (পৌর বা ইউনিয়ন কর), পোস্ট অফিস (বাংলা), পোস্ট কোড সঠিক ভাবে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
- এরপর আপনার কাছে একটি বক্স আসবে যেখানে লেখা থাকবে, আবেদন করতে কোন প্রকারের কাগজপত্র আপলোডের কোন প্রয়োজন নেই। তারপর পরবর্তীতে ধাপে ক্লিক করে ফর্মটি সাবমিট করে দিবে। তবে মনে রাখবেন ফর্মটি সাবমিটের পূর্বে ভালোভাবে সবকিছু মিলিয়ে দেখবেন যেন কোন ভুলভ্রান্তি না থাকে।
- ফর্মটি সাবমিটের পরে আপনাকে পুনরায় হোমে নিয়ে আসবে। হোমে আসার পরে প্রোফাইলে ক্লিক করবেন এবং ক্লিক করা মাত্র আবার আপনি নিজের প্রোফাইলটি দেখতে পাবেন এবং ডানদিকে দেখতে পাবেন ডাউনলোড নামে একটি অপশন এসেছে। সেখানে ক্লিক করে আপনার আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট বের করে নিন। এভাবে আপনার আবেদন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- অনলাইনের আবেদনপত্রটি এবং আবেদনপত্রে অবশ্যই শনাক্তকারী অর্থাৎ নিজ পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন/ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর স্বাক্ষর ও সীল এবং অভিভাবকের স্বাক্ষর।
- আবেদনকারীর ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি,
- আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের ফটোকপি (যেটি আবেদনের সময় দেখানো হয়েছে),
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি,
- আবেদনকারীর রক্তের গ্রুপের ফটোকপি,
- আবেদনকারীর নিজ ঠিকানার নাগরিকত্ব (মূল কপি বা ফটোকপি)
- আবেদনকারীর নিজ পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন/ইউনিয়ন হতে নতুন ভোটার হবে মর্মে একটি আবেদনপত্র। (মূলটি)
- বাসার হোল্ডিং বা করের কাগজের ফটোকপি,
- বাসার বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি,
- আবেদনকারী যদি অসমর্থতা অর্থাৎ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয় তবে তার প্রতিবন্ধী কার্ডের ফটোকপি
নির্ধারিত আবেদন ফি
আবেদন পত্রের তথ্য যাচাই
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন
জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ
আপনি যদি আমাদের আজকের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে আসেন তবে আমার নিশ্চায়তা দিচ্ছি যে, নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গা ধারণা পেয়েছে এবং এখন আপনি নিজে নিজে এটি আবেদন করতে সক্ষম।